সিরীয় প্রধানমন্ত্রী রিয়াদ হিজাবের পক্ষত্যাগকে বাশার আল আসাদের সাম্রাজ্য ভেঙে যাওয়ার একটি নমুনা হিসেবে অভিহিত করছে পশ্চিমা শক্তিগুলো।
রিয়াদ হিজাবের পক্ষত্যাগের খবর নিশ্চিত হওয়ার পরপরই দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউজ ‘সময় এখন বিরোধীদের অনুকূলে’ বলে মন্তব্য করে। অপরদিকে ফরাসি সরকার তাদের দেওয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, ‘আসাদের সরকার এখন ধ্বংসের পথে।’
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জে কারনি বলেন, ‘সরকারের এত উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার পক্ষত্যাগ, ক্ষমতার রশিতে প্রেসিডেন্ট আসাদের লাগাম এখন আলগা হওয়ার পথে, এ সংকেতই দেয়।’
ক্ষমতার নিজস্ব বলয়ের ওপর প্রেসিডেন্ট বাশারের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে না পারা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তার অক্ষমতার নামান্তর বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন ‘সময় এখন বিদ্রোহী এবং সিরীয় জনগণের পক্ষে’।
অপরদিকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লঁরা ফেবিয়া বলেন রিয়াদ হিজাবের পক্ষত্যাগ শাসক চক্রের দুর্বলতার লক্ষণ। তিনি বলেন, ‘আসাদ চক্র এখন ধ্বংসের পথে।’
সিরিয়ার সহিংসতা শুরুর পর রিয়াদ হিজাবই এখন পর্যন্ত সরকারি পক্ষত্যাগ করা দেশটির সবচেয়ে হাই প্রোফাইল ব্যক্তিত্ব। সোমবার পক্ষত্যাগের পর দেওয়া এক বিবৃতিতে সিরিয়ার বর্তমান সরকারকে ‘সন্ত্রাসী শাসক চক্র’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। একই সঙ্গে সরকার বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ারও ঘোষণা দেন তিনি।
সিরীয় প্রধানমন্ত্রীর আগে গত মাসে ইরাকে নিযুক্ত সিরীয় রাষ্ট্রদূত নাওয়াফ ফারেসও পক্ষত্যাগ করে বিদ্রোহে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন। তার আগে পক্ষত্যাগ করেন সিরিয়ার প্রভাবশালী রিপাবলিকান গার্ডের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মানাফ তালাস। সিরীয় প্রেসিডেন্টের খুব ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচনা করা হতো তাকে।
রিয়াদ হিজাবের পক্ষত্যাগের খবর প্রথম প্রকাশ পায় সিরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে। ‘দু’মাস আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রিয়াদ হিজাবকে বরখাস্ত করা হয়েছে’ বলে এ সময় ঘোষণা করে তারা।
এর অল্পপরই প্রধানমন্ত্রী হিজাবের পক্ষে তার এক মুখপাত্র জর্দান থেকে আল জাজিরা টেলিভিশনে একটি বিবৃতি পাঠ করে শোনান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিজাব ও তার পরিবার সিরিয়া ত্যাগ করেছেন।’ বর্তমানে তিনি নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করছেন বলেও এ সময় জানান তিনি।
আল জাজিরায় হিজাবের দেওয়া বিবৃতি পাঠ করে শোনান তার মুখপাত্র মোহাম্মদ আল আতরি। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমি সন্ত্রাসী ও হত্যাকারী শাসক চক্রের পক্ষত্যাগ করে পবিত্র বিপ্লবে যোগ দিচ্ছি। আমি ঘোষণা করছি, আজ থেকে এ পবিত্র যুদ্ধে আমি একজন যোদ্ধা।’
অসমর্থিত সূত্রে খবর বের হয় রিয়াদ হিজাব সীমান্ত অতিক্রম করে জর্দানে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু জর্দানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এ খবর অস্বীকার করে। তবে লেবানন থেকে বিবিসির একজন সংবাদদাতা জানিয়েছেন হিজাব এখন কাতারের পথে বলে একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানতে পেরেছেন তিনি।
সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দেইর আল জোর অঞ্চলের একটি সুন্নি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রিয়াদ হিজাব। সংখ্যালঘু আলাউতি শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত বাশার আল আসাদ শাসক চক্রের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান সুন্নি চরিত্র।
এদিকে সোমবার আরও দুই মন্ত্রী পক্ষত্যাগ করেছেন বলে দাবি করেছে সরকার বিরোধীরা। পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ জালিলাতি পালিয়ে যাওয়ার সময় সিরীয় কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়েন বলে জানায় তারা। তবে সিরীয় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দাবি করেছে, জালিলাতি এখনও তার স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করছে। টেলিফোনে নেওয়া তার একটি সাক্ষাতকারও এ সময় প্রচার করা হয় সিরীয় টেলিভিশনে।
ইতিমধ্যেই সিরিয়ার ৩০ জন উচ্চপদস্থ সেনা কমকর্তা পক্ষত্যাগ করে তুরস্কে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের আনাতোলিয়া নিউজ এজেন্সি। এছাড়া সম্প্রতি ৫ পদস্থ কমকর্তা ও ৩০ সেনা নিয়ে এক সিরীয় জেনারেল পক্ষত্যাগ করে তুরস্কে এসেছেন বলে দাবি করেছে তারা।
এদিকে সংঘাতের প্রধান যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়া উত্তরাঞ্চলীয় বাণিজ্য নগরী আলেপ্পোতে উভয় পক্ষের মধ্যে লড়াই এখনও অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। নগরীর বিভিন্ন এলাকা লক্ষ্য করে সরকারি সেনাদের আর্টিলারির গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা সত্ত্বেও বিদ্রোহীরা তাদের প্রতিরোধ বজায় রেখেছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ‘সিরিয়ান অবসার্ভেটরি ফর হিউমান রাইটস।’