হারুন-আমীনসহ ডেসটিনির ৫ কর্মকর্তার জামিন

হারুন-আমীনসহ ডেসটিনির ৫ কর্মকর্তার জামিন

তিন হাজার ২৮৫ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় সাবেক সেনাপ্রধান ডেসটিনি গ্রুপের সভাপতি লে. জেনারেল (অব.) হারুন অর রশিদ ও ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ প্রতিষ্ঠানটির ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

অপর তিন আসামি হলেন, ডেসটিনি ২০০০ লি. চেয়ারম্যান মো. হোসেন, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের পরিচালক গোফরানুল হক ও সাঈদ উর রহমান।

গত ৩১ জুলাই দুদকের উপপরিচালক মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দু’টি দায়ের করেছিলেন।

সোমবার সকালে তারা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।

শুনানি শেষে মহানগর হাকিম এরফান উল্লাহ বিশ হাজার টাকার মুচলেকায় চার্জশিট দাখিল পর্যন্ত অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন।

আসামিপক্ষে ঢাকা মহানগরের সাবেক পিপি এহসানুল হক সমাজী ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী নজিব উল্লাহ হিরু জামিন আবেদনের শুনানি করেন। অন্যদিকে দুদকের বিশেষ পিপি কবির হোসেইন জামিন আবেদনের বিরোধীতা করেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন ও ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কিন্তু বর্তমানে তাদের পৃথক দু’টি অ্যাকাউন্টে মাত্র ৫৬ লাখ ও ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। বাকি টাকা তারা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে। ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে কমিশন হিসেবে তা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা কর্মকর্তা ও এজেন্টদের কাছ থেকে আত্মসাৎ করে।

এ মামলার অপর আসামিরা হলেন, মেজবাহ উদ্দিন স্বপন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানি, মিসেস ফারাহ দীবা, জমসেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ বিশ্বাস, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়বুর রহমান জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকরাম হোসেন সুমন, মিসেস শিরিন আক্তার, মো: রফিকুল ইসলাম সরকার, মজিবুর রহমান, সুমন আলী খান, সাইদুল ইসলাম খান (রুবেল), আবুল কালাম আজাদ ও লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেড (ডিটিপিএল) কর্তৃপক্ষ সাধারণ জনগণ ও বিনিয়োগকারীদের অধিক লাভের কথায় প্রলুব্ধ করে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিতে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড এর মাধ্যমে অবৈধভাবে ৬ কোটি ১৮ লাখ ৬৩০টি গাছ ও পাওলোনিয়া ট্রি স্ট্যাম্প বিক্রি করে সর্বমোট ২ হাজার ৩ শ’ ৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা সংগ্রহ করে। এরমধ্যে ডিটিপিএল কর্তৃপক্ষ মোট ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৮০টি গাছ এবং ২১ হাজার পাওলোনিয়া ট্রি স্ট্যাম্প জনগণের মধ্যে সরবরাহ করে বলে দাবি করে। তারা ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৮০টি গাছ বিক্রি করে ২শ’ ৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং ২১ হাজারটি পাওলোনিয়া স্ট্যাম্প বিক্রি করে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করে কিন্তু ডিটিপিএল কর্তৃপক্ষ এমএলএম পদ্ধতিতে গাছ বিক্রির বিধান না থাকা স্বত্ত্বেও ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের মাধ্যমে ২০০৬ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতারণাপূর্বক আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে গাছ বিক্রি করে জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।

এ টাকা থেকে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের পরিচালকরা নিজ নিজ স্বার্থে বেতন-ভাতা, অনারিয়াম, ডিভিডেন্ট ও ইনসেন্টিভ এবং কমিশন গ্রহণের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে ১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা, এর মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে ১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা এবং স্থিতি আছে ৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ফারাহ দীবার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে ৮১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, এর মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে ৭৩ কোটি ২৭ লাখ এবং স্থিতি আছে ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে ১ কোটি ৯১ লাখ টাকা, উত্তোলন করেছেন ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং স্থিতি আছে মাত্র ১ লাখ টাকা। পরিচালক সাঈদ-উর রহমানের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে ১৭৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, এর মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে ১৬৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং স্থিতি আছে ৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। পরিচালক গোফরানুল হকের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে ৮৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, এর মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে ৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং স্থিতি আছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এ ছাড়াও অন্যান্য কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত হিসাবেও ওই টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।

এভাবে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের পরিচালকগণ ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেড থেকে ব্যবস্থাপনা কমিটির সহায়তায় নিজেদের ইচ্ছামাফিক অর্থ আসামিদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ডেসটিনি গ্রুপের অলাভজনক কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে স্থানান্তর করে সমিতির মূলধনের অবক্ষয় ঘটান।

পরবর্তীতে কমিশন বেতনভাতা অনারিয়াম ডিভিডেন্ডের আবরনে নিজেদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

 

বাংলাদেশ