পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আগে ভাবতে হবে নিরাপত্তা: মেনন

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আগে ভাবতে হবে নিরাপত্তা: মেনন

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, বিদ্যুৎ সমস্যা দূর করতে সরকার রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি করেছে। কিন্তু পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আগে আমাদের ভাবতে হবে, সেটি ব্যবস্থাপনায় আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি  কিনা। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে জনস্বাস্থ্য-ঝুঁকিসহও অন্যান্য যে ঝুঁকি রয়েছে, সেসব নিয়েও ভাবতে হবে।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ আয়োজিত ৬৮তম হিরোশিমা দিবসের আলোচনাসভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “ইরান-উত্তর কোরিয়া পরমাণু শক্তির পরীক্ষা চালাচ্ছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর অবরোধ আরোপ করছে। অপরদিকে, ইসরায়েলের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকলেও তাদের কিছু বলছে না। এটা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউক্লিয়ার ব্ল্যাকমেইলিং।“

রাশেদ খান মেনন সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘‘সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জোরদার করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের পরমাণু নৌ-শক্তি বৃদ্ধির তৎপরতা চালাচ্ছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে। সেখানে কোনো বিস্ফোরণ হলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো তা আমাদের ভাবতে হবে।’’

অনুষ্ঠানের আলোচক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের(জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলে বলেন, ‘‘আমরা উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু এখনো আমরা কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে পৌঁছাতে পারিনি। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে বিশ্বের দেশে দেশে সামরিক অস্ত্রের মজুদ গড়ে তোলা হচ্ছে। এতেও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। মূলত: প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রকে ঘায়েল করতেই এই সমর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’

‘‘এশিয়ার মানুষ আণবিক, সাম্প্রদায়িক ও দারিদ্র্যের বোমার ওপর রয়েছি’’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বকে বাঁচাতে হলে ও শান্তি আনতে হলে বিশ্বের প্রতিটি দেশের জাতীয় বাজেটে সামরিক বরাদ্দ কমিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাড়াতে হবে।

হাসানুল হক ইনু বলেন, “বিজ্ঞান যদি মানবতা বিবর্জিত হয়, সে বিজ্ঞান কল্যাণকর হতে পারে না। আণবিক শক্তিকে ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার না করে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করতে হবে।“

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির(সিপিবি) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে পরিমাণ পারমাণবিক বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র  রয়েছে, তা দিয়ে তারা বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষকে ধ্বংস করতে পারে। অনেক সময় মার্কিন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের অস্ত্র ব্যবসা ফেল করে না।“

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে দুর্নীতি ও মানবাধিকারের অস্ত্র প্রয়োগ করে আমাদের ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে। তারা চতুর্দিক থেকে বাংলাদেশকে ঘিরে ফেলেছে, যে রকম আমরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীকে ঘিরে ফেলেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে, তারা আমাদের কতোটা নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে।’’

তিনি আরো বলেন, অনেকে বলেন, আমেরিকাকে প্রতিরোধের অবস্থা বিশ্বে কারোর নেই। কিন্তু সার্কভূক্ত দেশসহ গোটা এশিয়ার দেশগুলো এক হলে অবশ্যই এদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক আগ্রাসন রোখার কথা বলে ও সোভিয়েত রাশিয়াকে মোকাবিলার জন্য ন্যাটো বাহিনী গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে তো সেই আগ্রাসন নেই। তারপরও কেন এই বাহিনী থাকবে? মূলত: মার্কিনীরা তাদের বহুজাতিক কোম্পানিকে প্রতিষ্ঠার জন্য এ বাহিনীকে কার্যকর রাখছে। “

বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন, গণঐক্যের আহ্বায়ক পংকজ ভট্টাচার্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া, গণফোরামের  নেতা সগীর আনোয়ার, গণতন্ত্রী পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ড. শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ।

 

রাজনীতি