দীর্ঘ আট মাসের মহাকাশ অভিযাত্রা শেষে মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ করল নাসার কিউরিওসিটি রোবট। এর মাধ্যমে আমাদের সৌরজগতের এ লাল গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ সংগ্রহ করতে পরিচালিত বিজ্ঞানীদের ব্যয়বহুল একটি অভিযান সফলতার দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেল।
নাসা জানিয়েছে, মঙ্গলের বৈজ্ঞানিক রোবট কিউরিওসিটি রোববার গ্রিনিচ মান সময় ৫টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১১টা) মঙ্গলপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করেছে। এদিন থেকে মঙ্গল গ্রহে আনুবীক্ষণিক প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার দুই বছর মেয়াদি অভিযান শুরু করল কিউরিওসিটি।
কিউরিওসিটি ইতোমধ্যে ছবি পাঠানোও শুরু করেছে বলে জানিয়েছে নাসা।
মিশন নিয়ন্ত্রক লস অ্যাঞ্জেলেসের জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরি জানিয়েছে, মঙ্গলের কক্ষপথে পরিভ্রমণরত নভোযান থেকে তারা কিউরিওসিটির মসৃন অবতরণের ব্যাপারে নিশ্চিত সংকেত পেয়েছেন। অবতরণ তাদের পরিকল্পনা মতোই হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
প্রায় এক টন ওজনের এই রোবটটি একটি রোবটিক স্পেসফ্লাইটের মাধ্যমে মঙ্গলের পৃষ্ঠে নামানো হয়। রোবটটি নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিতে ঠাসা। এর মধ্যে রয়েছে লেজার যা মঙ্গলের কোনো শিলাখণ্ড পরীক্ষা করে এর গঠন বৈশিষ্ট্য জানাতে পারবে। আরো আছে উচ্চ ক্ষমতার ক্যামেরা যা দিয়ে মঙ্গলের ভূপ্রকৃতির ছবি ইতোমধ্যে পাঠানো শুরু করেছে রোবটটি।
আট মাসের বেশি সময় যাবত মহাকাশ অভিযানে পৃথিবী থেকে ৫৭ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে মঙ্গলের মাটির নাগাল পেল কিউরিওসিটি। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা এর ভ্রমণপথকে প্রায় নিখুঁত বলে বর্ণনা করেছেন।
রোবটিক স্পেসফ্লাইটের সহায়তায় রোবট নামানোর এ অর্জনকে জটিলতম কাজের একটি বলে বর্ণনা করেছে নাসা।
আড়াইশ’ কোটি ডলার ব্যয়ে এই কিউরিওসিটি প্রকল্পকে ‘মারস সায়েন্স ল্যাবরেটরি’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে যা ১৯৭০’র দশকের ভাইকিং অভিযানের পর নাসার প্রথম জ্যোতিজীব বৈজ্ঞানিক মিশন।
নাসার মঙ্গল প্রকল্প এ অভিযানকে ‘দুঃসাহসিক’ বলেই বর্ণনা করছে। এ-ই প্রথম এতো বেশি ওজনের (৯০০ কিলোগ্রাম) একটি রোবট মহাকাশের কোনো গ্রহতে অবতরণ করাতে সক্ষম হল নাসা।
‘স্কাই ক্রেন’ দিয়ে এভাবে রোবট অবতরণ করার দৃশ্যের একটি সিম্যুলেশন দিয়ে আগেই নাসা একটি ভিডিও গেম তৈরি করেছে। মহাকাশ নিয়ে আগ্রহীদের কিউরিওসিটির ল্যান্ডিং দৃশ্য লাইভ দেখার অনুভূতি দিতে তারা নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে বিশাল পর্দায় দেখানোর ব্যবস্থা করেছে।