জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তির সময় অতিরিক্ত উন্নয়ন ফি ৫ হাজার টাকা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা অগ্রণী ব্যাংক অবরোধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আবির বাংলানিউজকে জানান, হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বুধবার মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি নবীনদের এ আন্দোলনে আরও বেশি করে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনের নামে ব্যাংক অবরোধ সম্পূর্ণ্য অযৌক্তিক। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এতে সম্পৃক্ত ছিল না বলেও তিনি দাবি করেন।
আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফি প্রত্যাহারের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা ব্যাংক অবরোধ করলে ছাত্রলীগ তাদের উপর দু’দফা হামলা চালায়। এতে ছাত্রজোটের কমপক্ষে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত এবং দু’ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করা হয়।
মঙ্গলাবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথম এবং পৌনে ১২টায় দ্বিতীয় দফায় এ হামলা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংক শাখার প্রবেশ পথে জোটের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাংকে যাওয়ার মূলগেটে তালা লাগিয়ে দেন তারা। তখন নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।
জোটের নেতাকর্মীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে। তারপরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা উন্নয়ন ফি দেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
অবিলম্বে এ ফি প্রত্যাহার করে মেদাবী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বাধা দূর করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ পুলিশের উপস্থিতিতে তালা ভেঙে ফেলেন।
এরপর থেকে ব্যাংকের প্রবেশ পথে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল করে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
এতে ছাত্রফন্টের আহ্বায়ক শরিফুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফারুখ আহামেদ আবির, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম শ্রাবণ, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কর্মী হাসান, মোর্শেদ, আজাদ, মিশু, ফেডারেশনের তানিয়া ইসলাম আহত হয়।
এদের মধ্যে শরিফুল হক চৌধুরী, আজাদ, জেমসকে ঢাকা মিডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার সময় মিশু ও তানিয়াকে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ।
তানিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের উপর হঠাৎ করে হামলা চালায়। এ সময় বেশ কয়েকজন আমার উড়না টেনে নিয়ে যায়।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে প্রগতিশীল ছাত্রজোট বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারের সামনে এ হামালার প্রতিবাদ করলে আবারও হামালা চালায় ছাত্রলীগ।
এ সময় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের জেমস, তিথি, হাবীবা, আশা আহত হয়। পরে ছাত্রলীগের কর্মী রিগান ও তানভীরও আহত হয়।
জবি শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আকন্দ ছাত্রজোটের উপর ছাত্রলীগের হামলার কথা অস্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা ক্যাম্পাসে মিছিল সমাবেশ করছি। ব্যাংক অবরোধ করে তারা শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে বাধা দিচ্ছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়ে থাকতে পারে।
ভর্তি হতে আসা মিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন হয়েছে। তারওপর নির্ধারিত এই ৫ হাজার টাকা উন্নয়ন ফি দিতে চাইনা বলে আমরাও জোটের আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে ছাত্রলীগ ছাত্রজোটের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের উপর ছাত্রলীগের হামলা প্রসঙ্গে প্রক্টর কামাল উদ্দিন আহামেদ বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়টি আমি শুনিনি। প্রক্টোরিয়াল বডির সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালউদ্দিন বাংলানিউজকে হামলা প্রসঙ্গে বলেন, আন্দোলনকারীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বাধা মৃষ্টি করছিল। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের একটা ছোট সংঘর্ষ হয়।
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।