প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হলে সমাজে দারিদ্র্য, অসাম্য, বঞ্চনা এবং প্রান্তিকীকরণ বাড়ে। শেষপর্যন্ত এগুলো উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের জন্ম দেয়।
রোববার রূপসী বাংলা হোটেলে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়ন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য দারিদ্র্য, ক্ষুধা বিমোচন, বৈষম্যদূরীকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে বঞ্চনার অবসান, সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সকলের অধিকতর অংশগ্রহণ, টেকসই এবং সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন জোরদার করা, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য এসবের বাস্তবায়ন জরুরি।
জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের একটি মডেলও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে সভাপতি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
দীপু মনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দশকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যে সংগ্রাম করেছেন তারই একটি প্রতিফলন হলো এ মডেল।”
ভারতের পল্লীউন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন, “বাংলাদেশ দারিদ্র্যদূরীকরণ, ক্ষুধা বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জনগণের ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে ভারতের অনেক রাজ্যের চেয়ে ভালো করেছে।”
তিনি বলেন, “ভারতের অনেক রাজ্য আছে যা বাংলাদেশের চেয়ে ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু জনগণের ক্ষতায়নের ব্যাপরে তারা বাংলদেশ থেকে পিছিয়ে আছে।”
অনুষ্ঠানে মালদ্বীপের ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার আলী হামিদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মডেল বাস্তবায়নে মালদ্বীপ যাবতীয় সহায়তা করবে।”
ভুটানের মানব উন্নয়ন মন্ত্রী লিওনপো জোসাই জিম্বা বলেন, “জনগণ যখন তার অধিকার অর্জনের জন্য নিজ থেকে উঠে দাঁড়াবে তখনই ক্ষমতায়ন হবে। ‘গ্রস ন্যাচারাল হ্যাপিনেস’–এর মধ্য দিয়ে মডেলটির বাস্তব রূপ দেওয়া সম্ভব।”
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের দু্ই আন্ডার সেক্রেটারি।
উল্লেখ্য, রোববার সকালে ঢাকায় শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর জনগণের ক্ষমতায়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। দুই দিনের এ সম্মেলনে ৬২টি দেশ অংশ নিচ্ছে।
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়া, জাপান, জার্মানি, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, বেলারুশ, বেলজিয়াম, বেনিন, ভুটান বসনিয়া- হার্জেগোবিনা, বারকিনা ফাসো, চিলি, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ডোমিনিকা, এল সালভাদর, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গায়ানা, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, লাইবেরিয়া, মাদাগাস্কার, মালয়, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মেক্সিকো, মরক্কো, নরওয়ে, নামিবিয়া, নেপাল, নিকারাগুয়া, নাইজিরিয়া, প্যারাগুয়ে, পেরু, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, রোমানিয়া, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, সোমালিয়া, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, তুরস্ক, উগান্ডা, ইউক্রেন, তানজানিয়া, উরুগুয়ে, ইয়েমেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন।
পাঁচটি দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিয়েছেন। এরা হলেন- নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী নারায়ণ কাজী সেরেস্তা, ভারতের পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ, শ্রীলংকার মন্ত্রী জি এল প্যারিস, ভুটানের মানব উন্নয়ন মন্ত্রী লিওনপো জোসাই জিম্বা, মালদ্বীপের ডেপুটি পররাষ্ট্র মন্ত্রী আলী হামিদ।
অপর দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরাই নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
সম্মেলনের প্রধান ইস্যুগুলো হচ্ছে : দারিদ্র এবং ক্ষুধা দূরীকরণ, বৈষম্য দূরীকরণ, ক্ষতিপূরণ আদায়ে করণীয়, সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ।