দফতরবিহীন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি বলেছেন, ‘‘একটি বিশেষ ব্যাংককে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে, এটা আইনের সার্বজনীনতা নয়। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক গরিবের ব্যাংক, সরকার একে নিয়ে যাচ্ছে। তার মতো আন্তর্জাতিক মানের একজন ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা এমন বক্তব্য আশা করি না।’’
শুক্রবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটির বীরত্তোম খাজা নাজিম উদ্দিন অডিটরিয়ামে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সংবিধানের বাইরে গিয়ে আমাদের কিছু করার নেই।’’
বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য তিনি বলেন, তাদের জন্য তিনটি দুর্লভ সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা সব সুযোগই নষ্ট করেছে। এর পেছনে তাদের নতুন কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে।
তিনটি সুযোগের বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রথমত: নির্বাচন ব্যবস্থা সংশোধন সংক্রান্ত কমিটিতে বিরোধী দলকে রাখা হয়েছিল। সেখানে তারা অবদান রাখতে পারতেন। কিন্তু তারা আসলেন না।’’
‘‘দ্বিতীয়ত: তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, দু’টি নির্বাচন এ ব্যবস্থায় করা যেতে পারে। আমরা অপেক্ষা করেছিলাম, আপনারা পার্লামেন্টে এসে কথা বলবেন। তাও আপনারা আসলেন না।’’
‘‘তৃতীয়ত: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তবর্তী সরকারের প্রস্তাব দিলেন। বিশ্বব্যাপী তা প্রশংসিত হলো। গণতন্ত্র রক্ষায় এর চেয়ে উদারতা আর হতে পারে না। সেটাও আপনারা গ্রহণ করলেন না। শেষ সুযোগটিও নষ্ট করলেন।’’
বিরোধী দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আসলে তারা চান, আবারও একটি ১/১১ মার্কা অবস্থা। কারণ, যাদের জন্ম অসাংবিধানিকভাবে তাদের কাছে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক আচরণ আশা করা দুষ্কর।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, তারা বলেছে, বর্তমান সরকার একটি অসাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। প্রমাণ করেছে, জঙ্গিবাদ দমনে তারা অটল। এই সরকার এশিয়ার জনগণের মধ্যে কানেকটিভিটি সৃষ্টি করেছে।
সুরঞ্জিত বলেন, এটা প্রমাণ করে বিগত চারদলীয় জোট সরকার জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ, আওয়ামী লীগ আন্দোলন-সংগ্রামের দল।
১৫ আগস্ট কৃত্রিম জন্মদিন পালন করে বিকৃত উল্লাস না করার জন্য বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান তিনি।
সভার বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার মহানায়ক। যারা অখ্যাত মেজরকে স্বাধীতার ঘোষক বলেন, তারা স্বাধীনতাকেই অপমান করেন।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু না থাকলে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী এদেশ থেকে যেতো না। বঙ্গবন্ধু ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, বাংলাদেশ ততোদিন স্বাধীন হবে না, যতোদিন এ দেশের মাটি থেকে বিদেশি সৈন্যবাহিনী না যাবে। তাই বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গতা দিয়েছেন।
অন্য বিশেষ অতিথি আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ৭১’র ঘাতকদের প্রেতাত্মারা এখনো চারপাশে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষের পথে। তাই তারা তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু সৃষ্টি করে দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিতে চায়। তবে বেশিরভাগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এ বছরের মধ্যে অবশ্যই সম্পন্ন হবে।
ঈদের পর বিরোধী দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আপনারা কি আন্দোলন করবেন, তা আমরা জানি।’’ আওয়ামী লীগ এসব আন্দোলন প্রতিহত করতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ঢাকা মহানগরের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফাতেমা বেগম সাথীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠন ও আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দেন।