ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করেছে ভোলার মেঘনা। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও লাগাতার বর্ষণে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে বসত-ভিটা, মাছের আড়ৎ, ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরইমধ্যে শহররক্ষা বাধের কাচিয়ার ভবানীপুর অংশে পুরাতন ও নতুন বাধ ভেঙে ২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ভোলা শহর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প বাধ নির্মাণ কাজ শুরু করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো।
ভাঙনের ফলে বেড়িবাধে আশ্রিত মানুষের নির্ঘূম রাত কাটছে। ঘর বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন তারা। শুক্রবার সরেজমিনে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ জানান, নদী ভাঙনে ঘর বাড়ি হারিয়ে যায় আবার নতুন করে ঘর বাধেন বেড়িবাধের মানুষ। বার বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নি:স্ব হয়ে পড়ছেন এ এলাকার মানুষ।
নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এক প্রান্তে ভাঙা বাধ মেরামত করতে না করতেই আবার অন্য প্রান্তে আরেক পয়েন্ট দিয়ে ভাঙছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে নদীর উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে।
কাচিয়া ইউপি সদস্য মো. আশিক বলেন, শুক্রবার ভোরে সদরের ভবানীপুর অংশে প্রবল জোয়ারের চাপে পুরাতন শহররক্ষা বাধ ভেঙে যায়। ওই ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে নতুন শহর রক্ষা বাধের ৫টি পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢুকে ২টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
তিনি আরও জানান, সকাল থেকেই ভাঙাবাধ মেরামতে স্থানীয় এলাকাবাসী ও পাউবো কর্মকর্তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে, দুর্বল বাধ নির্মাণ করে ভাঙন রোধে কোনো কাজেই আসবে না বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। তারা সিসি ব্লক স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
ভাঙণ কবলিত এলাকার গৃহবধূ সালমা আক্তার ও হাসনা বেগম বলেন, বেড়ি বাধ ভেঙে আমাদের ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ৮বার ভাঙনের শিকার হয়েছি। এখন আবারও ভাঙনের কবলে পড়েছি। এখন ঘর ভিটা হারিয়ে গেলে কোথায় যাবো তা বুঝতে পারছি না।
স্থানীয় বাসিন্দা পাভেল বলেন, ভাঙনের কবলে পড়ে নদীর তীরবর্তি মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা ঘর বাড়ি সরানোর চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করতে পারছে না।
জানা গেছে, বিগত মৌসুমগুলোতে ভাঙন কম হলেও চলতি বর্ষা মৌসুমে মেঘনার ভয়াল ছোবলে ১২’শ পরিবার ভিটা ছাড়া হয়েছে। অধিকাংশ পরিবার রয়েছে খোলা আকাশের নিচে। ভাঙন আতঙ্কে গাছ-পালা পানির দামে বিক্রি করে দিচ্ছে এলাকাবাসী ।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফজলে এলাহামী বলেন, ভোলা শহরকে রক্ষার জন্যে ১৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে আছে। ওই প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই ভোলাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, আপাতত ভাঙা পয়েন্ট দিয়ে বিকল্প বাধ নির্মাণ করা হচ্ছে।