টেকসই অর্থনীতি নির্মাণে তৃণমূলে গভর্নর

তিনি ২০০৯ সালের মে মাসে গভর্নর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের খেটে খাওয়া মানুষের জন্য তার অনুসৃত কল্যাণমূলক নীতি আর উদ্যোগ ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশংসিত হয়েছে। তার পরিচিতি ছড়িয়েছে গরীব-বান্ধব গভর্নর হিসেবে।

এটা সম্ভব হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চলমান মন্দার আবহে দেশের ব্যাংকিং খাতকে একটি শক্তিশালী কাঠামোয় দাঁড় করাতে ড. আতিউর রহমানের দিনমান সারাক্ষণ অভিনিবেশ আর পরিশ্রমের কারণে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি যেভাবে সাধারণ মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করেছেন সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ৮০টি সভা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। কথা বলেছেন ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, কৃষক, পিছিয়ে পড়া মানুষ, জন প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হিসেবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এসব মত বিনিয়ম করতে গিয়েছেন বিভিন্ন প্রান্তে। কথা বলেছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তার এই তদারকি কার্যক্রম ব্যাংকগুলোকে নিয়ে গেছে সাধারণ মানুষের কাছে। এমনটিই মনে করা হচ্ছে। টেকসই অর্থনীতির জন্য যা ছিল জরুরি।

ব্যাংকিং সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে উন্নত বিশ্বসহ বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর আর্থিক খাতে চলছে অস্থিতিশীলতা। ফলে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ধরে রাখাটা বড় চ্যালেঞ্জ। আর্থিক খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিগত, আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বহুমাত্রিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। আর এ পুরো সময়টাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বে রয়েছেন বর্তমান গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

তিনি ২০০৯ সালের মে মাসে গভর্নর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে তার অনেক উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে পরিচিতি পেয়েছেন গরীব-বান্ধব গভর্নর হিসেবে। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি যেভাবে সাধারণ মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করেছেন তা প্রশংসনীয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে ড. আতিউর রহমান তার মেয়াদে যেভাবে মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক মানুষের সাথে মিশেছেন এমন দৃষ্টান্ত এর আগে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি এশিয়ার কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর তার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এভাবে কাজ করেছেন- তার নজিরও খুব একটা নেই বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র দাবি করে।
BB20120BB20120
মফস্বলে সফরকালে তিনি সাধারণ মানুষের কথা শুনেন। তাদের সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন। আহ্বান জানান, ব্যাংকগুলোকে তাদের পাশে থাকার।

সূত্র জানায়, দায়িত্ব গ্রহণের  পর ড. আতিউর রহমান ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামে কৃষকদের সঙ্গে মত বিনিময় করার মাধ্যমে এই কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবগুলো শাখা সফর করেন এবং সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে কল্যাণমূলক নীতি গ্রহণের চেষ্টা শুরু করেন। পথ খোঁজেন মানবিক ব্যাংকিং করার কৌশল গ্রহণের।

তথ্য মতে, ২০০৯ সালের ৬ মাসে ১৬টি তৃণমূল সভা করেন গভর্নর। এরপরের বছর ২০১০ সালে ৩২ বার ঢাকার বাইরে গিয়ে মত বিনিময় করেন। বাগেরহাট, বরিশাল, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যান। ২০১১ সালে ১৬টি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সাধারণ মানুষের কথা শুনেছেন তিনি। আর সবশেষ ৬ মাসে ১৭ বার বিভিন্ন জেলায় যান।

ব্যাংকিং খাতকে মানবিক করতে তার প্রশংসা দেশ ছাড়িয়ে আজ বিদেশে হচ্ছে। সম্প্রতি এর স্বীকৃতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারের জন্য। পেয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস সম্মাননাও।

জানা গেছে, ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে ব্যাংকিং খাতকে আরো মানবিক ও দরিদ্র বান্ধব করতে কাজ করছেন তিনি। ইতোমধ্যে অনেকটা সফল হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতের নজরদারিতে কৌশলগত পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঠিক নীতি ও কৌশল দেশের প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে গত তিন বছরের গড় প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের বেশিতে দাঁড়িয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে এ অঞ্চলে একমাত্র ভারতের পর বাংলাদেশের অবস্থান। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ওপরে। প্রবৃদ্ধির এই হার অনেকটাই অংশগ্রহণমূলক ও কাঙ্ক্ষিত গুণমানের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১১-১২ অর্থ বছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এসে দাঁড়ায় প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার। যা এযাবত কালের সর্বোচ্চ। অপরদিকে, ২০১০-১১ অর্থ বছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

জানা গেছে,  অন্তর্ভূক্তিমূলক ব্যাংকিং ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক হিসাব ঘোলার ব্যবস্থা করেছেন ড. আতিউর রহমান। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ কৃষক এর আওতায় সেবা পাচ্ছেন। ছাত্র/ছাত্রীদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার জন্যে ১৪টি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং স্কিম চালু করা হয়েছে। ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা এই হিসাব খুলেছে।

 

অর্থ বাণিজ্য