আলমাস সুপার শপের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে ক্রেতারা। বিভিন্ন সময় বিদেশি পণ্যের নামে ভেজাল পণ্য, পণ্যের মোড়কে ইচ্ছামত এমআরপি (ম্যাক্সিমাম রিটেইল প্রাইস বা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) লাগিয়ে এবং নকল ও নিম্নমাণের পণ্য ক্রেতাদের মাঝে বিক্রি করে প্রতারণার যেন ফাঁদ পেতে বসেছে আলমাস সুপার শপ।
আলমাসে খাদ্য, শাড়ি, পোশাক, জুয়েলারি, কসমেটিক, সুগন্ধি, চশমা, জুতা, স্যান্ডেল, উপহার সামগ্রি, খেলনা, সিডি, ডিভিডি, স্টেশনারি, ইলেক্ট্রনিক্স, ব্যাগ সহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয়।
কিন্তু আলমাস সুপার শপ থেকে বিদেশি এবং গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যের নামে জিনিসপত্র কিনে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ছেন, হচ্ছেন প্রতারিত।
সোজা কথায় বিদেশি পণ্যের নাম করে স্থানীয় পণ্য গছিয়ে দিয়ে ক্রেতা ঠকাচ্ছে আলমাস। আবার এখানে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যের গায়ে বিএসটিআই’র কোনো সিল নাই।
রাজধানীতে আলমাস এর শাখাগুলোতে পণ্যের দামের ক্ষেত্রে তারতম্য দেখা গেছে। একই পণ্যের গুলশান শাখায় এক দাম তো ধানমন্ডিতে আরেক দাম।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, আসল পণ্যর নাম করে নকল পণ্যও সরবরাহ করছে আলমাস। নানান ঘটনা সূত্রে ক্রেতাদের অভিযোগের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পণ্যের গুণগত মান ভালো ভেবে পণ্যক্রয়ে ঠকছে ক্রেতারা।
এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ধানমন্ডি শাখার ছাত্রী মারুফা ইয়াসমিন মুক্তা বলেন, আমি এক মাস আগে আলমাসের ধানমন্ডি শাখা থেকে বিদেশি ইয়ার্ডলে সাবান কিনেছিলাম।
যখন সাবানটি আমি ব্যবহার করতে শুরু করি এর কয়েক দিন পর লক্ষ করলাম সাবানটি নকল আসল না। এর পর আমি এটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকি। কারণ, আমি এই পণ্যটি প্রায় ব্যবহার করি এর আগে কখনও (কয়েকদিন ব্যবহারের পর) এতে দুর্গন্ধ হতে দেখিনি।
ক্রেতারা প্রায় বিভিন্ন সময়ে নকল পণ্যের অভিযোগ নিয়ে আসে এর আলমাসে দায়িত্বরত ম্যানেজার কোনো ধরনের তর্কাতর্কি না করে সরাসরি টাকা ফিরিয়ে দেয়।
একই অভিয়োগ জানিয়ে গুলশান-১ এর একটি প্রাইভেট কোম্পানির ডিরেক্টর হাফিজ আহম্মেদ বলেন, আমি আলমাসের গুলশান শাখা থেকে ডাভ ব্রান্ডের ৫০০ এমএল একটি বডি লোশন কিনেছিলাম ৪১০ টাকা দিয়ে। এরপর ব্যবহারের কিছুদিন যেতে না যেতে দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে এর থেকে।
আমি বডি লোশনটি নিয়ে আলমাসে আসি। তারা আমাকে সঙ্গে সঙ্গে টাকা ফিরিয়ে দিল এবং ‘সরি’ বলল। পাশিপাশি এমন পণ্য দোকানে না রাখার অঙ্গীকার করল।
আমরা জানি চেইন সপের পণ্যগুলি সাধারণত এক জায়গায় থেকে নেওয়া হয়। কিন্তু এখানকার পণ্যগুলি একেক জায়গা থেকে নেওয়া। ফলে পণ্যের মান নিয়ে বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা।
ধানমন্ডি আলমাস সপে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ কসমেটিক পণ্যের গায়ে কোনো এমআরপি লেখা নাই। এরা ইচ্ছামত এমআরপি লিখেছে।
এ বিষয়ে আলমাসের ধানমন্ডি শাখায় কর্তব্যরত সেলসম্যান বলেন, বিদেশে থেকে লাগেজে করে পণ্য আসে। তাই এমআরপি বা বিএসটিআই এর সিল লাগে না।
আবার দেখা গেছে ধানমন্ডি শাখার সুপার সপের সঙ্গে গুলশান শাখার দামের কোনো মিল নাই। যেমন ধানমন্ডি শাখায় ডাবের ৫০০ মিলির বড়ি ওয়াস লোশনের দাম ৪২৫ টাকা। অপরদিকে গুলশান শাখায় একই পণ্যের দাম ৩৮০ টাকা।
নকল পণ্য সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে আলমাস এর ধানমন্ডি শাখার ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিদিন আমরা ডিস্ট্রিবিউটারের মাধ্যমে হাজার হাজার পণ্য ক্রয় করি। সুতরাং কয়েকটি পণ্যের সমস্যা থাকতে পারি।
পণ্যের গায়ে দাম লিখা থাকে না কেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থাইল্যান্ড সিঙ্গাপুরের কোনো পণ্যের মোড়কে দাম লিখা থাকে না।
একটি প্রাইভেট কোম্পানির এজিএম মানজুর মোর্শেদ বলেন, আমি আলমাসের বসুন্ধরা সিটি শাখা থেকে বোটস এর ফেস-ওয়াস ক্রয় করেছিলাম। এর কিছুদিন পরে এটি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। এরপর সেটি ফেরত দিতে যাই। দেখা গেল কোনো রকম তর্কাতর্কি ছাড়াই তারা আমাকে টকা ফিরিয়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, আমি এই পণ্য এর আগে ব্যবহার করেছি কিন্তু এমনটি হবার কথা না।
তিনি আরো বলেন, আলমাস আমার কাছে বোটস এর যে ফেস-ওয়াস বিক্রি করেছে তা নিঃসন্দেহে নকল।
আর নকল যদি না হবে তবে কেন কোনো ধরনের তর্কাতর্কি ছাড়া আমাকে মানি রিফান্ড দিবে? আসল পণ্য হলে তারা আমাকে চ্যালেঞ্জ করতো।