রেকর্ড গড়া হয় ভাঙ্গার জন্য। ১৯৬৪ সালে ততকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের জিমন্যাস্ট লারিসা লাতিনিনা সবচেয়ে বেশি ১৮টি অলিম্পিক পদক জয়ের যে রেকর্ড গড়ে ছিলেন, সাঁতারু মাইকেল ফেলপস মঙ্গলবার রাতে তা ভাঙ্গলেন লন্ডনের অ্যাকুয়াটিক সেন্টারে। ফেলপস রেকর্ড ভেঙ্গেছেন না বলে রেকর্ড গড়েছেন বললে সুন্দর শোনায়।
অলিম্পিকে সবচেয়ে বেশি ১৯টি পদক জয়ের রেকর্ড এখন ফেলপসের দখলে। লারিসার রেকর্ডটি টিকে ছিলো প্রায় ৪৮ বছর। ফেলপস সেটিকে যে উচ্চতা দিতে যাচ্ছেন তার আয়ু শতবর্ষের হতে পারে।
সবচেয়ে বেশি অলিম্পিক পদক জয়ের রেকর্ড গড়া ছিলো ফেলপসের জন্য সময়ের ব্যাপার। ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলে ইভেন্টে কোন পদক না জেতায় খানিকটা দেরি হয়। মঙ্গলবার ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে রৌপ্য জিতে লারিসার রেকর্ড ছুয়েছেন। পরে ৪x২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতে দলগত স্বর্ণ জিতে সবচেয়ে বেশি অলিম্পিক পদক জয়ের রেকর্ড নিজের করে নেন।
রিলে ইভেন্ট দিয়ে লন্ডন অলিম্পিকে প্রথম স্বর্ণ পদকও জিতলেন ফেলপস। এই চারদিনে দুটি ব্যক্তিগত এবং দুটি দলীয় ইভেন্টে অংশ নিয়ে তিনটি পদক জেতেন তিনি। লারিসা রেকর্ড ভাঙ্গার জন্য যে কোন রঙের তিনটি পদক হলেই হতো ফেলপসের। এখনো যে তিনটি ইভেন্ট বাকি আছে তা থেকে পদক জিততে পারলে অধরা এক উচ্চতায় পৌঁছে যাবেন তিনি।
ফেলপস এখন কিংবদন্তির কিংবদন্তি। স্যার ফেলপস বললেও বলতে পারেন। তিনি পর পর দুই অলিম্পিকে রেকর্ড ১৪টি স্বর্ণ পদক জিতে কিংবদন্তির কাতারে আগেই আসন পেয়েছেন। লন্ডন অলিম্পিকে সেটাকে আরও উঁচুতে নিতে এসে তাল হারিয়ে ফেলেছিলেন। তার সামনে দিয়ে যা কিছু হয়েছে সেটাকে বিস্ময়কর না বলে উপায় ছিলো না। ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলের বাছাইয়ে বাদ পড়তে পড়তে অষ্টম হয়ে ফাইনালে ছিলেন। ওই ইভেন্ট জিততে পারলে পর পর তিন অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড হতো। স্বর্ণ দূরে থাক পদকই পাননি। চতুর্থ স্থানে থেকে শেষ করেছেন সাঁতার। তার স্বদেশি রায়ান লোক্টি জিতেছেন স্বর্ণ পদক।
পরের দিন যুক্তরাষ্ট্র পুরুষ দল ৪x১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতে ফ্রান্স দলের কাছে হেরে দ্বিতীয় হয়। স্বর্ণের জায়গায় রৌপ্য নিয়ে লন্ডন অলিম্পিক গেমসে প্রথম পদক জয়ের স্বাদ নেন জলমানব।
২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে রেকর্ড তৃতীয় স্বর্ণ জয়ের হাতছানি ছিলো। মনে মনে তৈরিও ছিলেন ফেলপস। সাঁতার বোদ্ধাদের বিশ্বাস ছিলো এই ইভেন্টে ফেলপস জিতবেনই। হায় কপাল, জল দেবতাদের আর্শিবাদ পাননি। হেরে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ২০ বছর বয়সী এক তরুণের কাছে। ক্যাড লে ক্লস ১ মিনিট ৫২.৯৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথমবারের মতো অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ পদক জিতলেন।
অ্যাথেন্স এবং বেইজিংয়ে যার পায়ের কাছে অলিম্পিক এবং বিশ্ব রেকর্ড লুটোপুটি খেয়েছে, সেই ফেলপস ১ মিনিট ৫৩.০১ সেকেন্ডে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেন ২০০ মিটার বাটারফ্লাই। পর পর তিন অলিম্পিকে প্রজাপতির মতো ঝাপিয়ে দাপিয়ে রেকর্ড গড়া হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের মাহনায়কের।
তবে ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে রৌপ্য জেতায় সবচেয়ে বেশি অলিম্পিক পদক জয়ী সাবেক জিমন্যাস্ট লারিসার পাশে জায়গা করে নিয়েছিলেন। ফেলপস দুই অলিম্পিকে পেয়েছেন ১৬টি পদক। ১৪টি স্বর্ণ ও দুটো ব্রোঞ্জ। ২০০৪ সালে অ্যাথেন্সে ছয়টি স্বর্ণ ও দুটি ব্রোঞ্জ জিতে মার্ক স্পিৎজের রেকর্ড আলোচনায় নিয়ে এসেছিলেন। বেইজিংয়ে চিত্রনাট্য সাজালেন নিজের মতো করে। স্পিৎজের সাত স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড ভেঙ্গে তিনি জিতলেন আটটি।
২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতে স্বর্ণ পদক জয়ের আগে লন্ডনে গত চার দিন তিনি যা দেখেছেন তা ছিলো কল্পনার অতীত। বেইজিংয়ে যে ছেলেটি হেসে খেলে রেকর্ড আটটি সোনার পদক জিতেছেন, এবারের অলিম্পিকে তার ভাগ্যে লেখা হয় একের পর এক পরাজয়। অতিমানব থেকে নেমে আসেন সাধারণ রক্ত মাংসের মানুষের কাতারে।