পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ বাতিলের ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়ার কথা বিশ্ব ব্যাংক বললেও নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ সংস্থাটি উপস্থাপন করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লন্ডন সফরকালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিশ্ব ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগও আনেন।
অলিম্পিকের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লন্ডন যাওয়া শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার গত ২৬ জুলাই নিয়েছিল বিবিসি। ‘হার্ড টক’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে সোমবার তা প্রচারিত হয়।
দুর্নীতির বিষয়ে সতর্ক করার পরও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি- বিশ্ব ব্যাংকের এই অভিযোগের বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক হঠাৎ করেই দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলেছিল। আমি নিজে এবং অর্থমন্ত্রীর বলার পরেও তারা দুর্নীতির বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।”
সেতুর তদারকি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক নিয়োগসহ কোনো পর্যায়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
তাহলে একজন মন্ত্রী (সৈয়দ আবুল হোসেন) পদত্যাগ করলেন কেন- প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা ওই পদক্ষেপকে ‘সাহসী’ অভিহিত করে বলেন, “অনেক মানুষ তার দিকে অভিযোগ তোলায় তিনি পদত্যাগ করেছেন। তিনি যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতেন, তাহলে সম্ভবত তিনি পদত্যাগ করতেন না।”
দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের পাঠানো চিঠিগুলো প্রকাশ না করার কারণ বিবিসির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিধি-নিষেধ থাকায় তা করা সম্ভবপর নয়।
বিশ্ব ব্যাংকই সেই চিঠি প্রকাশ করতে পারে- প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে বিবিসির সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী স্টিফেন স্যাকুর বলেন, রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রক্ষার নীতি অনুযায়ী বিশ্ব ব্যাংক তা প্রকাশ করবে না। বাংলাদেশ সরকারের অধিকার আছে তা প্রকাশ করার।
তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওই চিঠি কেনো অর্থ বহন করে না। তাদেরকে এটা প্রমাণ করতে হবে। শুধু একটা চিঠি দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারে না।”
তিনি বলেন, “তাদের কাছে যদি নির্ভরযোগ্য প্রমাণ থাকে, তাহলে তারা তা দিচ্ছে না কেন? আমি ব্যক্তিগতভাবে বললেও তারা তা করেনি।
“তাদের দেওয়া প্রথম দুটি চিঠিতে যাদের বিষয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার মধ্যে আমার সরকারের কেউ বা কোনো মন্ত্রী নেই, আমি দেখেছি, সেগুলোতে আগের সরকারের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে।”
তদন্তে বিশ্ব ব্যাংকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়টির তদন্তে বিশ্ব ব্যাংককে সব ডকুমেন্ট পাঠাতে বললেও তারা অস্বীকার করে।
“দুই বার তারা (বিশ্ব ব্যাংক) চিঠি পাঠালেও তাতে কোনো প্রমাণ না দিয়ে শুধু অভিযোগ তোলা হয়েছে।”
চিঠিতে সরকার প্রধান ও জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের ‘দুর্নীতি’র কথা রয়েছে বলে বিরোধী দলের অভিযোগের বিষয়টি বিবিসি তুলে ধরলে শেখ হাসিনা বলেন, “বিরোধী দল যে কারো প্রতি অভিযোগ করতে পারে।”
সংবিধান সংশোধন
সাক্ষাৎকারে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপের পক্ষেও যুক্তি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তার সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করেছে।
এর ফলে বিরোধী দলের আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণের অনিশ্চয়তার বিষয়টি তুলে ধরা হলে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশ ঐক্যবদ্ধ আছে। আপনি নির্বাচনের ফলাফল বিচার করলেই তা স্পষ্ট হবেন।”
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চায়- বিরোধী দলের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো অসাংবিধানিক বা স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় আসতে না পারে।”