কুমিল্লার মুরাদনগরের শ্রীকাইলে দুই নম্বর অনুসন্ধান কূপে আরেকটি স্তরে গ্যাস পেয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মর্তুজা আহমেদ ফারুক জানান, গত ১৩ জুলাই ২ নম্বর কূপের যে স্তরে গ্যাস পাওয়া গিয়েছিল, তার ওপরে এই স্তরের অবস্থান। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ড্রিলিং স্টেম টেস্ট (ডিএসটি) পরীক্ষায় ওই স্তরে গ্যাস থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
“ডিএসটি পরীক্ষায় উপরের স্তরে আমরা গ্যাসের ভালো চাপ পেয়েছি। তবে মজুদ জানতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে”, বলেন তিনি।
বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর বলেন, আগের নিচের জোনটি (স্তর) ছিল ২৬ মিটার পুরুত্বের। আর ওপরের জোনটি ৪৮ মিটার পুরু।
“ওপরে আমরা ৭৬০ পিএসআই (প্রেসার পার স্কয়ার ইঞ্চি) চাপে গ্যাস পেয়েছি। এ থেকে ধারণা হচ্ছে, এখান থেকে দৈনিক ১৭ মিলিয়ন ঘণফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে।
এর আগে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীকাইলের এই কূপে গ্যাস পাওয়ার ঘোষণা দেয় বাপেক্স। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান সে সময় আশা প্রকাশ করেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য’ প্রমাণিত হলে এই কূপ থেকে দৈনিক ১৬ থেকে ১৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হতে পারে।
দুই নম্বর কূপ থেকে বাণিজ্যিক উত্তোলন শুরু হলে দেশে চালু কূপের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮২টি। আর সেক্ষেত্রে এই ক্ষেত্রের গ্যাস শিল্প, সার ও বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা যাবে বলেও জানিয়েছিলেন হোসেন মনসুর।
২০০৪ সালেও একবার শ্রীকাইলে গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কারের ঘোষণা দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সেখানে গ্যাস মেলেনি। তবে ওই স্ট্রাকচারের পাশেই আরেকটি স্থানে প্রায় ১৫০ লাইন কিলোমিটার দ্বি-মাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ চালিয়ে অনসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় বাপেক্স।
সে সময় ধারণা করা হয়েছিল, এই ক্ষেত্রে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস থাকতে পারে।
চলতি বছর মে মাসে এ কূপের কাজ শুরুর পর গত ২৯ জুন ৩ হাজার ২১৪ মিটার পর্যন্ত খনন শেষে এ কূপের খনন সমাপ্ত করা হয়। এরপর দুইদিন লগিং (গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত) এর কাজ চলে। তখনই বাপেক্স জানিয়েছিল, কুমিল্লার মুরাদনগরে শ্রীকাইলে গ্যাস পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।
‘শ্রীকাইল তেল/গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১ কোটি ১২ লাখ টাকা।
পট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে দেশে দৈনিক দুই হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে দুই হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে গ্যাসের প্রাথমিক মজুদ (প্রমাণিত ও সম্ভাব্য) ২০ দশমিক ৬২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এ মজুদ থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ দশমিক ৭৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। সেই হিসেবে গ্যাসের মজুদ বর্তমানে ৯ দশমিক ৮৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।
বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এ পর্যন্ত তিনটি ক্ষেত্রে গ্যাস পেয়েছে। ১৯৯৫ সালে ভোলার শাহবাজপুরে প্রথম, ১৯৯৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সালদায় দ্বিতীয়, গত বছরের ২৮ অগাস্টে সুন্দলপুরে তৃতীয় ক্ষেত্রে গ্যাস পায় প্রতিষ্ঠানটি।