রাজধানীর গুলশানের ব্যবসায়ী চাঞ্চল্যকর ফজলুল হক হত্যাকাণ্ডের জন্য ওই বাড়ির কাজের লোকদেরই সন্দেহ করছে পরিবার। বাড়ির যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাতে করে বাহিরের লোক এসে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে না বলে তারা নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়াও ফজলুল হকের ব্যক্তিগত কোন শত্রুও ছিলনা।
পরিবারের এই সন্দেহের কথা জানিয়েছেন ফজলুল হকের বড় মেয়ে হাসিনা জাকির।
এদিকে ফজলুল হক হত্যার ঘটনায় গতরাতে গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তার স্ত্রী শামসুন্নাহার। নিহত ফজলুল হকের ময়নাতদন্ত শেষে তাকে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
জানা গেছে, নিহত ফজলুল হকের ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে। এরা হলো হাসিনা জাকির, শিরিন শরফুদ্দিন, লুবনা এবং রুবিনা জাফর এরা সবাই বিবাহিতা। এক ছেলে আজহারুল ইসলাম আপন সে ও বিবাহিত।
সে গুলশানের ওই বাড়িতে বাবার সাথেই থাকতো। শনিবার পারিবারিক ইফতার পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য জামাইসহ তার মেয়েরা ও বেশ ক’জন আতœীয় বাড়িতে এসেছিলেন। শনিবার রাতেও তারা সেখানে ছিলেন।
ঘটনার পর গত রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই বাড়িতে গেলে তখনো শোকের মাতম লক্ষ্য করা যায়। নিহতের স্ত্রী ও স্বজনরা মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডে আহাজারি করছেন।
নিহতের বড় মেয়ে হাসিনা জাকির বলেন, শনিবার বাড়িতে ইফতার পার্টি ছিল। আর ইফতার পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য সবাই এসেছে। রাতে বাবা একাই এক রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। সকালে মা দেখেন রুমের দরজা খোলা। পরে আমরা মশারির ভেতর বাবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাই।
হাসিনা জাকির বলেন, আমার বাবার কোন শত্রু ছিলনা। এছাড়া রাজনৈতিক বা ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বও কারও সঙ্গে নেই। হত্যাকা-টি বাড়ির কাজের লোক দিয়েই সংঘটিত হয়েছে বলে আমাদের ধারণা।
তিনি বলেন, ঘটনার পরপর আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর তারা কাজের লোক সবুজ, আনোয়ার, সুমন, খোরশেদা, কোহিনুর, আম্বিয়া, লাইজু এবং ড্রাইভার শাহাদাৎকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গুলশান থানায় নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, পরে আমরা বাবার রুম ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই রুমের ভেতরে বাবার নিজের একটি আলমারি ছিল। সেখানে টাকা ও কাগজপত্র রাখতো। সেটির তালা ছিল ভাঙ্গা।
আমাদের ধারণা, খুনিরা বাবাকে হত্যা করে সেখানে রাখা টাকা নিয়ে গেছে। এছাড়া বাবার ম্যানিবাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে খুনিরা।
তিনি বলেন, রোববার ইফতারের পরপরই তার বাবার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বাসায় আনা হয়। রাতে তাকে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে গত রাত ১০ টার দিকে নিহতের স্ত্রী শামসুন্নাহার বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে কাউকে আসামি করা হয়নি।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার নিহত ফজলুল হকের বাসায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে তার চার মেয়ে জামাইসহ সবাই উপস্থিত হন। বাসার খাওয়া দাওয়া শেষে ফজলুল হকসহ যে যার যার রুমে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল ১০ টা হলেও তিনি ঘুম থেকে না উঠার কারণে তিনি বার বার ডাকতে থাকেন।
এক পর্যায়ে তিনি বিকল্প চাবি দিয়ে আউটলুক দরজার চাবি খুলে ভেতরে প্রবেশ করে রক্ত দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। তিনি কাছে গিয়ে দেখেন তার ঘাড়ে ধারালো ছুরি দিয়ে ্আঘাতের চিহ্ন।
তার চিৎকারে বাসার অন্যান্য লোকজন রুমে এসে দেখে তিনি মারা গেছেন। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ বাসায় এসে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে।
এজাহারে আরো বলা হয়, নিহতের রুম থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল, ম্যানিব্যাগ পাওয়া যাচ্ছেনা। এছাড়া রুমের ভেতরে তার নিজস্ব আলমারির ড্রয়ার ভাঙ্গা। সেই ড্রয়ারে অনেক টাকা পয়সা কাগজপত্র থাকতো। সেগুলো সেখানে নেই।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার সাব ইন্সপেক্টর পুস্পেন্দ্র দেব নাথ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যাদের আটক করা হয়েছিল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। এর বেশি কিছু জানাতে তিনি অস্বীকার করেন।
রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় শনিবার রাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় কেমিক্যাল আমদানি-কারক ও হক পেইন্টসের মালিক হাজী মোহাম্মদ ফজলুল হককে।