তেল আমদানিতে দেড় কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি নূরজাহান গ্রুপের

তেল আমদানিতে দেড় কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি নূরজাহান গ্রুপের

অপরিশোধিত পাম অলিন আমদানির ঘোষণা দিয়ে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এনে সরকারকে প্রায় দেড় কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান নূরজাহান গ্রুপ।

চট্টগ্রাম বন্দরের একটি অসাধু চক্রের যোগসাজশে এ বিশাল শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টমসের তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়েছে।

এদিকে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নূরজাহান গ্রুপ। আর তাতে  কাস্টমসেরই কিছু কর্মকর্তা তাদের সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নূরজাহান গ্রুপের মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানি করা ৫টি চালানে মোট ১ কোটি ৩৪ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে- মারিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড এবং নূরজাহান সুপার অয়েল লিমিটেড।

কাস্টমস সূত্র জানায়, প্রতি কেজি অপরিশোধিত পাম অলিন আমদানিতে শুল্ক ১.২৫ মার্কিন ডলার। আর প্রতিকেজি অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি শুল্ক ১.৭১ মার্কিন ডলার। প্রতি কেজিতেই শুল্কের হার দশমিক ৪৬ মার্কিন ডলার বেশি।

পাম অলিনের ঘোষণা দিয়ে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করে নূরজাহান গ্রুপ এই শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

সূত্র জানায়, ক্রুড পাম অলিনের ঘোষণা দিয়ে গত বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে এমটি ডলফিনা নামে জাহাজে করে মারিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ১২৬ কেজি (এইচএস কোড ১৫১১১০০০) তেল আমদানি করে নূরজাহান গ্রুপ। এ পণ্য খালাস নিতে গত বছরের ৯ আগস্ট বিল অব এন্ট্রি নাম্বার (সি-১০৩০৮২) দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি।

শূন্য দশমিক ৪৬ মার্কিন ডলার করে শুল্ক কম দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ওই চালানে মোট ৯৭ লাখ ২১ হাজার ৯৯১টাকা শুল্ক কম দিয়েছে বলে কাস্টমসের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

একই প্রক্রিয়ায় একই জাহাজে করে নূরজাহান সুপার অয়েল লিমিটেড’র নামে ৯৪ হাজার ৮২৭ কেজি তেল (এইচএস কোড-১৫১১১০০০) আমদানি করা হয়। এসব পণ্য খালাস নিতে গত বছরের ৯ আগস্ট বিল অব এন্ট্রি (সি-১০২৩০১) দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি।

এ চালানে মোট ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৯০৫ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।

এদিকে একই জাহাজে করে ক্রুড পাম অলিনের ঘোষণা দিয়ে মারিন ভেজিটেবল লিমিটেড’র নামে ৩৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৫ কেজি তেল আমদানি করা হয়। মোট ১২ লাখ ৭১ হাজার ৪৩৫টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গত বছরের ১৬ অক্টোবর পণ্য খালাসের জন্য বিল অব এন্ট্রি (সি-১২৮৯১৫) দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়া এমটি আলপিন ইমামা নামের আরেকটি জাহাজে করে আর্জেন্টিনা থেকে মারিনা ভেজিটেবল লিমিটেড’র নামে দুটি চালানে আমদানি করা ক্রুড সয়াবিন কম মূল্যে শুল্কায়িত করে ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৯৪৮ টাকা করে মোট ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮৯৬ টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে শুল্ক ফাঁকির বিষয়টি প্রমাণিত হলে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার ববাবর একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে মহাপরিচালকের পক্ষে যুগ্ম পরিচালক এম ফখরুল আলম স্বাক্ষর করেন।

চিঠিতে চট্টগ্রাম শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এর পর আর কোনো অগ্রগতি নেই। সূত্র জানিয়েছে কাস্টমস বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাই নূরজাহান গ্রুপকে অভিযোগ থেকে রেহাই দিতে কাজ করছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার ড. মারুফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করার জন্য ডেপুটি কমিশনার মাহমুদুল হাসানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান।

ডেপুটি কমিশনার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘নুরজাহান গ্রুপের কম মূল্যে শুল্কায়ন করার কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের তদন্তে কম মূল্যে শুল্কায়নের বিষয়টি প্রমাণিত হলেও তাদের সাথে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ একমত নয়।’

তবে এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ