ক্ষমতায় যেতে ত্রিমুখী আশাবাদ বিএনপি-আ’লীগ-জাপার

ক্ষমতায় যেতে ত্রিমুখী আশাবাদ বিএনপি-আ’লীগ-জাপার

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভাবছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি ঘটিয়ে নিরঙ্কুশ জয় পাবে তারা। বিপরীতে তাদের এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ মনে করছে, আসছে নির্বাচনে ফের তাদেরই দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেড দেবে জনগণ।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা) অবশ্য প্রধান দুই দলের মতো নিশ্চিত না হলেও আসছে নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিয়ে জয়ের ব্যাপারে দারুণ আশাবাদী। এমনকি আলাপকালে ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা আশাবাদ ধ্বণিত হয়েছে জামায়াত নেতাদের কণ্ঠেও।

তাই নির্বাচনের এখনও ঢের বাকি থাকলেও সব দলের ভেতরেই চলছে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যাওয়ার জোর প্রস্তুতি। চলছে গণসংযোগ আর ঘর গোছানোর তৎপরতা। নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন উভয় দলের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এখনই তারা ঠিক করে রাখতে চাইছেন নির্বাচনের কার্যকর কৌশল, ভোটারদের মন গলানোর সম্ভাব্য সব পথ। এ নিয়ে আলোচনার ঝড়ও নেহায়েত কম বইছে না রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে।

এদিকে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসছে বলে দাবি করছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অন্তত ১৭৫ আসনে ফের জয়ের ব্যাপারে আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ বক্তব্যের মাধ্যমে ২০০৮ সালের মতো অধিক আসন না পেলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যতো আসন পাবে তাতে সরকার গঠনে কোন সমস্যা হবে না বলেই বোঝাতে চেয়েছেন শেখ হাসিনা। তার দলের আবারও ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত বলে মনে করছেন তিনিও।

যদিও প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য “কর্মীদের দলে ধরে রাখার কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়” বলেও মনে করছেন কোন কোন রাজনীতি বিশ্লেষক।

তবে সরকারি বিশেষ এক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তব্য দিয়েছেন ধরে নিয়ে এতে অনেকটাই উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ অনুসারীরা।

আগামীতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ঠ আশাবাদী দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেনও।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ জনগণের দল। এ দলটি সব সময়ই জনগণের উপর নির্ভরশীল। জনগণই আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় বসাবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিএনপি গত নির্বাচনে হেরে গিয়ে এখন শুধু অন্যের অবস্থা খারাপ দেখছে। নিজেদেও কথা চিন্তা করছে না। এজন্যই তারা বলছে- সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই।”

তিনি বলেন, “কোন আসনে কোন সমস্যা থাকলে প্রধানমন্ত্রী সেগুলো কাটিয়ে ওঠার নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করছি সব সমস্যা কেটে যাবে।”

আগামী নির্বাচনে কতোটি আসন পাবেন বলে মনে করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভোট তো দেবে জনগণ। তাই কে কতোটা পাবে তা বলা মুসকিল। তবে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। তাই আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।”

অপরদিকে এ দাবি অসার দাবি করে ১৮ দলীয় জোট প্রধান বিএনপি নেতারা মনে করছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নিবাচর্নে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে।

তারা ভাবছেন, সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি,পদ্মাসেতু নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা, শেয়ার বাজারে লুটপাট, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা, সৌদি কুটনীতিক খালাফ আল আলী হত্যা, এম ইলিয়াস আলী গুম, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎতের দুর্নীতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অরাজক পরিস্থিতি, সর্বস্তরে চাঁদাবাজি ইত্যাদি কারণে জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ। তাই আগামী নির্বাচনে তাদের প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে জনগণ।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের বন্ধুহীন হয়ে পড়ার পরিস্থিতিও বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেবে তাদের। তাই দুর্নীতির কারণে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর থেকে দলটির নেতাদের বক্তব্যে ক্ষমতায় যাওয়া তাদের জন্য ‘সময়ের ব্যাপার’ বলেই মনে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড খন্দকার মোশররফ হোসেন বলেন, “আগামী নির্বাচনে জনগণ বিএনপির সঙ্গে থাকবে। তাই আগামীতে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়াটা সুনিশ্চিত।”

তিনি বলেন, “সর্বক্ষেত্রে ব্যার্থতা, আত্মীয়করণ ও দলীয়করণের কারণে জনগণ আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। জনগণ যে এ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছে তা এরই মধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “এ সরকারের দুনীর্তির কারণে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলা, লুটপাট, দুর্নীতি এখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। শেয়ারবাজারের ৩৩ লাখ পরিবার নি:স্ব হয়ে গেছে,  দ্রব্যমূল্য বাড়ছেই। আইনশৃংখলার চরম অবনতিতেও সাধারণ মানুষ দিশেহারা। দেশের মানুষ এ থেকে মুক্তি চায়। তাই তারা আগামীতে বিএনপিকেই ভোট দেবে।”

জনগণ বিএনপিকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি’ মনে করে বলেও দাবি করেন মোশাররফ।

এদিকে শীর্ষ দুই দলকে এমন আবহে রেখেই এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে এরশাদের জাতীয় পার্টিও। এ আশা নিয়েই দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চষে বেড়াচ্ছেন।

দলটির শীর্ষ নেতাদের ধারণা, আগামী জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলে বিএনপি ওই নির্বাচনে অংশ নেবে না। আর আওয়ামী লীগের উপর জনগণ ক্ষুব্ধ। এ পরিস্থিতি জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। তাই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আর একবার সরকার পরিচালনার সুযোগ চাইছেন এরশাদ। জয়ের ব্যাপারে দারূন আশাবাদী তিনিও।

এ প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “আশা করি আগামী নির্বাচনে জনগণ আমাদের পক্ষে রায় দেবে।”

তিনি বলেন, “জনগণ জানে, জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে শুধু উন্নয়নমুলক কাজই করেনি। বাংলাদেশের বড় বড় কাজগুলো এরশাদের সময়ই হয়েছে।”

“আওয়ামী লীগ ও  বিএনপি দু’টি দলের উপরই জনগণ এখন বিরক্ত” দাবি করে তিনি বলেন, “তাই জনগণ একটি পরিবর্তন চাচ্ছে। জনগণ এখন আর গতানুগতিকের পক্ষে নয়, তারা অস্বাভাবিক পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তন হবে জনগণের রায়ের মাধ্যমে। জনগণের রায়েই জাতীয় পার্টি আগামীতে সরকার গঠন করবে।”

এসবের বাইরে সিনিয়র ১০ জন নেতা জেলে থাকবেন ধরে নিয়েই নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে ১৮ দলীয় জোটে বিএনপির প্রধান শরিক জামায়াত। তবে তাদের টার্গেট ক্ষমতারোহন নয়, সম্মানজনক স্থান ধরে রাখা। এরই মধ্যে বিভিন্ন আসন টার্গেট করে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে তারা। এবার তাদের টার্গেট শতাধিক আসন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। তবে এক্ষেত্রে এককভাবে না নেমে বিএনপির সঙ্গে থেকেই যথাসম্ভব বেশি আসনে মনোনয়ন চাইবে তারা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, “জনগণ সবসময়ই নির্যাতিতদের পক্ষে থাকেন। যেহেতু এ সরকারের হাতে জামায়াত বেশি নির্যাতিত হয়েছে, তাই আগামী নির্বাচনে জনগণ এ দলটির পক্ষেই থাকবে।”

তিনি বলেন, “আমরা জনগণের উপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যাপারটা জনগণের ওপরই নির্ভর করছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসাবে একটা টার্গেট নিয়ে অবশ্যই কাজ করছে। তবে সেই টার্গেট সর্ম্পকে এখনই কিছু বলা যাবে না।”

বাংলাদেশ