ফি ঈদের বাজারে মেয়েদের পোশাক হিসেবে শাড়ি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হলেও এবার এর ব্যতিক্রম দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তরুণী থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী নারীরাও থ্রি পিস, ফতুয়া, টপস কিনছে সবচেয়ে বেশি।
তবে ফতুয়া, থ্রি পিস ও টি-শার্টের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও শাড়ির আবেদন একেবারে ফুরিয়ে যায়নি।
রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে দেশি দশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। লেভেল-৭-এর দেশি দশ প্রাঙ্গণে ক্রেতাদের ভিড় সকাল থেকেই। একই চত্বরে বিবিয়ানা, কে-ক্র্যাফট, বাংলার মেলা, রঙ, সাদাকালো, নগরদোলা, নিপুণ, দেশাল, অঞ্জনস ও প্রবর্তনা। একই ছাদের নচে দেশের ১০টি বুটিক হাউস। দেশি ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, দেশীয় কাপড়ে তৈরি পোশাক, শাড়ি, গামছা, লুঙ্গি, স্যান্ডেল, গৃহসজ্জার সামগ্রী, মাটির গহনা, ছোটদের খেলনা, ব্যাগ, ছবির ফ্রেম, শোপিস কি নেই এখানে!
দেশি দশের ব্যবসায়ীরা জানালেন, ক্রেতাদের মধ্যে এখনো নারীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। শিশুদের কাপড়ও ভালো বিক্রি হচ্ছে। পুরুষদের পোশাক পাঞ্জাবি রমজানের শেষের দিকে বেশি বিক্রি হয়। গত শুক্রবার থেকে কেনাকাটা জমে উঠেছে। ঈদ যত কাছে আসবে বিক্রি তত বাড়বে। আগামী মাসের শুরুতে ঈদের বেতন বোনাসের পর চাকরিজীবীরাও কেনাকাটায় ব্যস্ত হবেন। সব দোকানই অতিরিক্ত সেলসম্যান রেখেছেন ভিড় সমালানোর জন্য।
তিনি বলেন, “একজন মেয়ে হিসেবে বলবো, শাড়ি পরলে বারবার সেটার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হয়। আমরা এখন সবাই কর্মব্যস্ত তাই কম ঝামেলা ও আরামদায়ক পোশাক জরুরি।”
সাদাকালোর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সোহেল মাহমুদ বলেন, “শাড়ি ঈদের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলেও যে পোশাক সবসময় চলে তার চাহিদাই বেশি। একেবারে উচ্চবিত্ত ছাড়া সবাইকে হিসেব করেই খরচ করতে হয়। তাই ঈদে যে কাপড় কিনবে তা যেন সারা বছর ব্যবহার করার কথাটা ক্রেতাদের বিবেচনায় থাকছে।
সোহেল মাহমুদ বলেন, শাড়ির বিক্রি আগের চেয়ে কমেছে বলার চেয়ে ফতুয়া বা থ্রি পিসের চাহিদা বেড়েছে এটা বলা ভালো। আধুনিক মিডিয়া, আকাশ সংস্কৃতি ইত্যাদির কারণে পোশাকেও পরিবর্তন আসছে।
দেশি দশের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, “আমরা দেশি কাপড় বিক্রি করি। দেশীয় ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা পোশাক আনবো। এটা সত্য যে এখন মেয়েদের শাড়ির চেয়ে আধুনিক পোশাক বেশি চলে। বসুন্ধরা সিটিতে মূলত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা আসেন। ফলে এখানকার পোশাকের চাহিদা একটু আলাদা ও আধুনিক হবে।”
শাড়ি বিষয়ে তিনি বলেন, “বাঙালি নারীর কাছে শাড়ির আবেদন চিরন্তন। তবে এখনকার মেয়েরা কর্মমুখি হওয়ায় উৎসব ছাড়া শাড়ির ব্যবহার কমে যাচ্ছে।”
আতাউর রহমান বলেন, “দেশি দশ কেবল ঈদ উপলক্ষে নয়, বরং সবসময় মানসম্পন্ন পোশাক সরবরাহ করে থাকে। এখানে দেশি তাঁত, টাঙ্গাইলের কাপড়, সূতি কাপড় ও আরামদায়ক কাপড়ের প্রাধান্য থাকে। তবে ঈদে অনেক নতুন ডিজাইনের পোশাক আনা হয়েছে।”
যমুনা ব্যাংকের কর্মকর্তা মিতা রহমান সাদাকালোতে ফরমাল ফতুয়া খুঁজছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা কর্মজীবী নারীরা প্রথমেই চিন্তা করি আরামদায়ক ও ফরমাল কাপড়ের। শুধুমাত্র বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া শাড়ি পড়া হয় না বললেই চলে। তবে কর্মক্ষেত্র অনুযায়ী এসবের হেরফের হয়। ফুলহাতা ফতুয়ার সঙ্গে জিন্স, গ্যাবার্ডিন প্যান্ট বা পাজামা পড়া যায়। এসব পোশাকে কাজ করতে ও চলাফেরায় সুবিধাজনক মনে হয়। এসব একবার লন্ড্রি করলে অনেক বার পরা যায়।”
মাইলস্টোন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মায়িশা মিম বলেন, “দেশি দশে ভালো কাপড় পাওয়া যায়। দামও তুলনামূলক কম। একদম হওয়ায় ঠকার সম্ভাবনা কম। আর ফতুয়া বা টি-শার্ট এখনকার আধুনিক মেয়েদের পছন্দের পোশাক। আর শাড়ি পরা শিখতেও অনেক সময় লাগে। আমার আম্মুও থ্রি পিস পরেন।”