বন্দরনগর চট্টগ্রামে ইফতারের পদ হিসেবে কদর বাড়ছে ‘আরমান ফিরনি’র। ১৪-১৫ বছর ধরে রোজার মৌসুমে দেওয়ানহাট মোড়ের আকবর শাহ মাজারসংলগ্ন ‘ক্যাফে আরমান’ নামের একটি খাবার দোকান এ ফিরনি বাজারজাত করে আসছে।
নগরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং গলির মুখে ইফতারের দোকানগুলোতে বিকেল নামলেই বিক্রি শুরু হয় আরমান ফিরনির। পূর্ব ও পশ্চিম মাদারবাড়ি, আলকরণ, ফিরিঙ্গিবাজার, এনায়েত বাজার, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, কদমতলি, বাদামতলীসহ আশপাশের বড় একটি এলাকাজুড়ে বিক্রি হতে দেখা গেছে এ ফিরনি। এ ছাড়া ইফতার মাহফিলের জন্য আয়োজকেরা আগাম অর্ডার দিয়ে যান।
শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, বিশাল ডেকে (ডেকচি) ফিরনি তৈরি হচ্ছে। ফিরনি নাড়া, উপকরণ মেশানো, উনুনে লাকড়ি দেওয়ার কাজে ব্যস্ত বাবুর্চি। কিছু শ্রমিক মাটি ও প্লাস্টিকের বাটিতে পরিমাণ মতো ফিরনি ভরার কাজ করছেন। অন্যরা হোটেলের টেবিলগুলো জড়ো করে বড় একটি মঞ্চের মতো বানিয়ে তাতে সাজিয়ে রাখছেন, সেখানে বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে ঠা-া হচ্ছে ফিরনি। কেউ করছেন কাগজের বাক্সে ফিরনির কৌটা ভরার কাজটি। পাশাপাশি ব্যবস্থাপক আকতার হোসেন সামলাচ্ছেন পাইকারি-খুচরা ক্রেতাদের।
স্ট্র্যান্ড রোডের বাসিন্দা ইউসুফ নবী এসেছিলেন ২ কেজি আরমান ফিরনি নিতে। তিনি বলেন, ‘মেয়ের বাড়িতে আজ ইফতারি পাঠাচ্ছি। ভাবলাম আরমান ফিরনিও পাঠাই। এ ফিরনির স্বাদটা এমন যে জিভে লেগে থাকে।’
সবাই তো ফিরনি তৈরি করে, আপনাদের বিশেষত্ব কী? জানতে চাইলে ক্যাফে আরমানের স্বত্বাধিকারী মো. এরশাদ হোসেন প্রকাশ আরমান বলেন, আমাদের ফিরনিতে সাগুদানা, চাল, দুধ, চিনি, ঘি, লবণ এসবই দিয়ে থাকি। মূল বিষয়টা নির্ভর করে উপকরণগুলোর পরিমাণের ওপর। তা ছাড়া আমরা যেসব উপকরণ ব্যবহার করি সবই ভালো মানের। কারণ রোজাদারদের কথা মাথায় রেখেই এ ফিরনি তৈরি করি। তাই মান ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে আমরা আপস করি না।
গরুর দুধ ব্যবহার করেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না রে ভাই! অতো দুধ কোথায় পাব। তবে বাজারের সেরা গুঁড়োদুধটাই ব্যবহার করি।’
বৃষ্টির কারণে এবার ফিরনি বিক্রিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, রমজান মাসে ২৮ দিন ফিরনি তৈরির কাজ চলে। মূলত হোটেলের শ্রমিকেরাই এ কাজে জড়িত থাকে। কাউকে ছাঁটাই করা হয় না। বর্তমানে আমাদের এখানে কাজ করছেন ৫৫ জন শ্রমিক। ভোর ৫টায় প্রথম ডেক চুলায় তোলা হয়। এরপর একে একে সর্বোচ্চ ৭ ডেক পর্যন্ত তৈরি হয়। প্রতি ডেকে আড়াইমণ ফিরনি হয়। এবার রমজানে বৃষ্টি থাকায় অন্যান্য বারের চেয়ে চাহিদা কম।
ক্যাফে আরমানের ব্যবস্থাপক আকতার হোসেন বলেন, প্লাস্টিকের কৌটায় প্রতিকেজি আরমান ফিরনি ২০০ টাকা, আধা কেজি ১০০ টাকা, ছোট কাপ ২২ টাকা এবং মাটির পেয়ালায় ১৬ টাকা। পাইকারি ক্রেতাদের শতকরা ৫ ভাগ কমিশন দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, চন্দনাইশ উপজেলা থেকে দেড় টাকা দরে মাটির পেয়ালা কিনে আনেন তারা। এ ছাড়া ১ কেজি ফিরনির প্লাস্টিকের কৌটার ক্রয়মূল্য ১১ টাকা, আধা কেজির ৭ টাকা এবং কাপ প্রতিটি ১ টাকা।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো শুধু রোজার মৌসুমে চলে। তা-ও ২৮ দিনের ব্যবসা। অন্য সময় বন্ধ থাকে। তাই অনুমতি নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া আমরা কৌটা বা বাক্সের কোথাও বিএসটিআই’র মানচিহ্ন ব্যবহার করিনি। আমরা কোথাও বাজারজাত করি না। গলির মুখের ইফতারের দোকানিরা এসে নিয়ে যায়।