আইওসির অতিথি হয়ে অলিম্পিকে গেছে বাংলাদেশের পাঁচ অ্যাথলিট। তাদের কাছ থেকে দেশ তেমন কিছু আশা করে না। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ভালো করে জানে গেমস দর্শন ছাড়া তাদের পাঁচজন ক্রীড়াবিদের তেমন কিছু অর্জন করার নেই। আরেকটি অভিজ্ঞতা হবে বিশ্ব বরেণ্য ক্রীড়াবিদদের কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাবে।
যে ইভেন্টের ওপর প্রত্যাশা ছিলো সেখানে হতাশ করেছেন একমাত্র নারী শ্যুটার শারমিন আক্তার রত্না। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ৩৯৩ স্কোর করে ২৭তম হয়েছেন তিনি। জাতীয় দলের এই শ্যুটারকে তিন মাস লন্ডনে রেখে অনুশীলনের সুযোগ করে দেয় বিওএ। যদিও অলিম্পিক শহরে উন্নত প্রশিক্ষণের কোনো সুযোগ হয়নি তার। বিওএ কোনো বিদেশি কোচ নিয়োগ দিতে পারেনি রতœার জন্য। দেশি কোচ সোয়েবুজ্জামানের কাছেই প্র্যাকটিস করেছেন। রতœার মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে আরেক শ্যুটার তৃপ্তি দত্তও ছিলেন লন্ডনে। গেমস শুরুর আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। অতএব বিদেশে প্রশিক্ষণ করেও আসল লড়াইয়ে নেমে নিজের সেরা স্কোরটাও করতে পারেননি শ্যুটার রত্না। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে রতœার স্কোর ৩৯৮। ইংল্যান্ডে প্র্যাকটিসে করেছেন ৩৯৯ পর্যন্ত।
কিন্তু আসল লড়াইয়ে মানসিক চাপে সেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি বলে জানান জাতীয় শ্যুটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ বাবলু। প্রথম সিরিজ শ্যুটে পিছিয়ে পরেন রত্না। ১০ শটে ১০০‘র মধ্যে ৯৫ স্কোর করেন। পরের রাউন্ডে ৯৯, তৃতীয় রাউন্ডে ১০০ এবং চতুর্থ রাউন্ডে ৯৯ স্কোর করেলেও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি তিনি।
৫৯ জনের মধ্যে ২৭তম হয়েছেন রত্না। অলিম্পিক গেমসে নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে কোনো বাংলাদেশি অ্যাথলিটের এটিই সেরা পারফরমেন্স। ১৯৮৮ সালে সিউল অলিম্পিক গেমসে প্রথম বাংলাদেশি নারী শ্যুটার কাজী শাহানা পারভীন অংশ নিয়ে ৩৭৯ স্কোর করেছিলেন। ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকে সাবরিনা সুলতানা করেছিলেন ৩৮৬। সেখানে লন্ডনে রত্নার স্কোর ৩৯৩। শ্যুটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবলু একে অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম ৩৯৭-৩৯৮ স্কোর করবে রত্না। সে প্রথম রাউন্ডে প্রচন্ড চাপে থাকায় তা করতে পারেনি। তারপরেও বলবো খুব ভালো হয়েছে।’
বিশ্বকাপ শ্যুটিংয়ে কোয়ালিফাইং স্কোর থাকায় অলিম্পিক গেমসে বাছাই খেলতে হয়নি রত্নাকে। সরাসরি মূল প্রতিযোগিতায় খেলেন তিনি। কিন্তু গেমসে অংশ নেওয়ার জন্য তাকে নির্ভর করতে হয়েছে ওয়াইল্ড কার্ডের ওপর। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ২৯ জন সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। বাকি ৩০ জন গেছে আইওসির অতিথি হয়ে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের রত্নাও আছেন।
রত্নাকে লন্ডনে প্রশিক্ষণ করাতে গিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ হয় বিওএর। উন্নত প্রশিক্ষণের নামে টাকাগুলো আসলে জলে ফেলেছে বিওএ। ওই টাকা দিয়ে একজন বিদেশি কোচ এনে দেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে রত্নার সঙ্গে জাতীয় দলের আরও অনেকে উপকৃত হতেন। সঙ্গে রত্নাকে টার্গেট দিয়ে সম্মানি ঘোষণা করলে ফলাফল আরও সম্মানজনক হতে পারতো বলে মনে করেন বাবলু। আসলে গলদটা বিওএ‘র। তারা রত্নার জন্য লোক দেখানো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।
রত্না ৪ আগস্ট দেশে ফিরবেন বলে জানান শ্যুটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। ওই দিন হয়তো বাংলাদেশের বেশিরভাগ প্রতিযোগীকে ফেরত আসতে হবে।