বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আইন বর্তমান যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমরা প্রেস কাউন্সিল আইন পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সেটি ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভায় গেছে।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রমনায় তথ্য ভবন অডিটরিয়ামে ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ শীর্ষক সেমিনার ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক প্রদান-২০২১ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ বছর বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আজীবন সম্মাননা পদক পেয়েছেন সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা ক্যাটাগরিতে পদক পেয়েছেন দৈনিক জনকণ্ঠের প্রয়াত সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। আঞ্চলিক প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা পেয়েছেন চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বকোন পত্রিকা। গ্রামীণ সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে পদক পেয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার নিজামুল হক বিপুল। উন্নয়ন সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে মাজহারুর ইসলাম, নারী সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে দ্য ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার বনানী মল্লিক, ফটো সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে বাংলা ট্রিবিউনের ফটো সাংবাদিক মো. সাজ্জাদ হোসেন।
হাছান মাহমুদ জানান, নতুন আইন মন্ত্রিসভার মাধ্যমে সংসদে পাস হবে। তবে এ আইনটি ১৯৭৪ সালের সংশোধিত আইন হিসেবে থাকবে। কারণ বঙ্গবন্ধুর করা আইন বাদ দিয়ে নতুন আইন করার প্রয়োজন নেই। এটি সংশোধন করা হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন আইনে প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা বাড়বে। বর্তমানে যে ক্ষমতা রয়েছে তা অনেক নগন্য। নতুন আইনে শাস্তি ও জরিমানার বিধান বাড়বে।
তিনি বলেন, একটি সুস্থ সমাজের বিকাশের জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সংবাদ মানুষকে পথ দেখাতে পারে আবার একটি সংবাদ সমাজে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। তাই আমি মনে করি সাংবাদিকদের অনেক ক্ষমতা। তাই তাদের ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যতœবান হতে হবে। যখন একজন সাংবাদিক বিচার বিশ্লেষণ ও যতœবান না হয়ে ক্ষমতা ব্যবহার করে তখনই বিপত্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ রচনা করে গেছে শুধুমাত্র তা নয়। তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। একারণেই একটি রাষ্ট্রের বিকাশের জন্য, সমাজের বিকাশের জন্য, বহুমাত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য জ্ঞান, ন্যায়ের সমাজ ব্যবস্থা করার জন্য গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমের মধ্যে যাতে শৃঙ্খলা, নৈতিকতা নীতিবোধের চর্চা হয় সেজন্য প্রেস কাউন্সিল গঠিত হয়েছে। যাতে করে একজন পাঠক এর মাধ্যমে প্রতিকার পায়।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রকে গঠন করা আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব। দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। কাজেই সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যাতে কেউ বিপত্তিতে না পড়ে সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ১৯৭৪ সালের প্রেক্ষাপটের তুলনায় আজ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা সাড়ে ১২শ’। সব পত্রিকা মিলিয়ে চার হাজার। ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের সংখ্যা ৪০টি, অনলাইন গণমাধ্যমের সংখ্যা কয়েক হাজার, আইপি টিভির ব্যাপক বিস্তার রয়েছে। যেখানে অর্থনীতির গ্রোথ হচ্ছে, সাংবাদিকতার পরিধি অনেক বাড়ছে, তখন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার কারণে বাংলাদেশকে ইউএন কনভেনশন অন দ্য লস অব দ্য (সিআনক্লস) সদস্য বানিয়েছে। এ কারণেই আমরা আন্তর্জাতিক সালিশী আদালতে মামলা করে মিয়ানমার ও ভারতের কাছ থেকে এক লাখ ১৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র জয়লাভ করেছি। বঙ্গবন্ধু যদি ১৯৭৪ সালে এ আইনটি বাস্তবায়ন না করতেন তবে এ জয় আমরা পেতাম না।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের প্যানেল চেয়ারম্যান ও সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, রেডিও ক্যাপিটাল ও টেলিভিশন চ্যানেল নিউজটোয়েন্টিফোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেস কাউন্সিলের কর্মকর্তারা ও পদক প্রাপ্ত সাংবাদিকরা।