অলিম্পিকের আনুষ্ঠানিকতা তার উদ্বোধনে। কে কত সুন্দর অনুষ্ঠান উপহার দিতে পারে তা নিয়ে আয়োজক দেশের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা সব সময়ই থাকে। বেইজিং আগের সবাইকে ছাপিয়ে গেছে। লন্ডনও চার বছর ধরে তৈরি হয়েছে। শুক্রবার রাতে বিশ্বের সামনে তাদের সব আয়োজন তুলে ধরে ঈর্ষণীয় সব অনুষ্ঠানে।
বিশ্ব ক্রীড়ার মিলন মেলার যাত্রা জাঁকালো উদ্বোধনীতে। চোখধাঁধানো সব অনুষ্ঠান বিশ্বকে উপহার দিয়েছে বৃটেন। অনুষ্ঠানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে ছিলো আকর্ষণ। বর্ণীল, পবিত্রতার ছোঁয়া, চোখ জুড়ানো, হৃদয় স্পর্শী।
জ্ঞান প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ ইংলিশ জাতির উপস্থাপনের ঢংই আলাদা। আগামী দিনের প্রজন্মকে দিয়ে অনুষ্ঠানে প্রবেশ। ক্ষুদে ছেলে মেয়েদের সঙ্গীত পরিবেশনে বিশুদ্ধতা। পরের দৃশ্য স্তম্ভিত হয়ে যাওয়ার মতো। সেক্সপিয়ার চলে এলেন অলিম্পিক স্টেডিয়ামের সবুজ চত্বরে! তা কি করে হয়, আসলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে মঞ্চে আসেন ‘স্লাম ডগ মিলিওনার’র পরিচালক ড্যানি বয়েল।
পরিচালকের উপস্থিতিতে হরেক রকম চমক বিশ্বকে উপহার দেয় বৃটেন। আধুনিক বৃটেনের বিকাশ। শিল্প বিপ্লব। লন্ডনের ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা। অনুষ্ঠানের প্রতি সিকোয়েন্সের বিস্ময়, পলকে পলকে আনন্দ।
৮০ হাজার দর্শক স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। টিভির পর্দায় দেখেন বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয়। দর্শক কাতারে বিশ্বের বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গও ছিলেন।
আরে জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা মিস্টার বিন খ্যাত রোয়ান অ্যাটকিনসন-ও ছিলেন। স্বভাব সুলভ অভিনয় দিয়ে হাসির রোল ফেলেন মিস্টার বিন।
ড্যান্সাররা হোলা-হোপস ধরণের নৃত্য পরিবেশন করেন। জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হয় অলিম্পিক নিয়ে উন্মাদনার দৃশ্য। এমিলি স্যান্ডের গানে ৫০ জন নৃত্য শিল্পিকে নিয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত করিওগ্রাফার আকরাম খান জন্ম-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের দৃশ্য নাটকীয় ভাবে ফুটিয়ে তোলেন।
মাঠ প্রদক্ষিণে অলিম্পিকের ২০৪টি দেশ। সবার আগে গ্রিস। তার পিছু পিছু স্ব স্ব দেশের পতাকা নিয়ে ক্রীড়া দলগুলো। বাংলাদেশ দলের পতাকা বহন করেন আর্চার ইমদাদুল হক মিলন। অলিম্পিকে আজাবধি কোন পদক না পেলেও টিভির পর্দায় বাংলাদেশের ছোট্ট দলটিকে ঠিকই তুলে ধরে। দীর্ঘ মার্চপাস্ট শেষে আবার ফিরে আসে অনুষ্ঠানে। প্রজাপতি ডানা মেলে।
লন্ডন গেমস আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান সেবাস্তিয়ান কো ভাষণ দেন। পরে আইওসির প্রেসিডেন্ট জ্যাক রগ তার ভাষণে বলেন, ‘অলিম্পিক আয়োজনে লন্ডনের শত বছরেরও বেশি সময়ের ঐতিহ্য আছে।’ প্রাচীন এই নগরবাসীদের ধন্যবাদ জানান আইওসি প্রেসিডেন্ট। তিনি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সেচ্ছাসেবীদের কাছে, ‘হাজার হাজার সেচ্ছাসেবীদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তারা এ সময়ের সেরা, মেধাবী এবং জ্ঞানী’।
প্রথমবারের মতো অলিম্পিক সদস্যভুক্ত সকল দেশ থেকে নারী ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করায় তিনি আনন্দ প্রকাশ করেন।
অলিম্পিক পতাকা বহন করেন ডরিন লরেন, হাইলে জেব্রেসেলেসি, সেলি বাকের, সমি চক্রবর্তী, ড্যানিয়েল ড্যারেন বোয়িন এবং ব্রাজিলিয়ান পরিবেশ বিদ মারিনা সিলভা। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ছিলেন এই দলে। পরে আসেন কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী। বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ অলিম্পিকের ৩০তম আসরের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
অ্যাথলিটদের পক্ষ থেকে অলিম্পিক শপথ নেন সারা স্টিভেনসন। মশাল নিয়ে স্টেডিয়ামে আসেন স্যার স্টিভ রেডগ্রেইভ। একটি জেনারেশনকে উজ্জীবিত করার মূলমন্ত্রের আলোকে সাতজন তরুণ অ্যাথলিটকে দিয়ে লন্ডন অলিম্পিকে মশাল প্রজ্জ্বলন করানো হয়।
অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ফ্লেম। কে মশাল প্রজ্জ্বলন করেন তা রহস্যই থেকেছে। অখ্যাত সাত অ্যাথলিটকে দিয়ে ফ্লেম জ্বালানো হয়।
মশাল প্রজ্জালন শেষে আতশবাজীর ফোয়ারায় বর্ণীল হয়ে উঠে লন্ডন নগরী। অলিম্পিক স্টেডিয়াম থেকে বহুদূরেও সেই আলো বিচ্ছুরিত হয়। খানিক সময়ের জন্য রঙিন নগরীতে পরিণত হয় টেমস নদীর শহর।
পল ম্যাক কার্টনির সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শেষ হয় অলিম্পিক গেমসের প্রায় চার ঘন্টার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।