আসন্ন ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে দেদার ভারতীয় বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ঢাকায় পাচার হচ্ছে।
বিশেষ করে বৃদ্ধ ও মধ্য বয়সী নারীরা শিশু সন্তান সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে মাদক পাচার করছেন।
এদিকে, গত ২৩ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৪ দিনে ১০ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ। পরে থানায় মামলা দায়ের করে এদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদকের নিয়মিত চাহিদার তুলনায় ঈদ উপলক্ষে এর চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। তাই আগে থেকেই তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার দরিদ্র পরিবারের নারীদের দিয়ে ঢাকায় মাদকদ্রব্য পাচার করাচ্ছেন। বিনিময়ে কিছু নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছে তাদের।
গত ২৩ জুলাই সোমবার সকাল ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাগামী বাসে তল্লাশি চালিয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইলিয়াস হোসেন মুন্সি ৫ জনকে আটক করেন।
এদের মধ্যে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার তেরশ্রী গ্রামের রমজান মাস্টারের মেয়ে সুমাইয়া খানম দিশা ওরফে বিথীকে (৩০) ৪৪ বোতল, চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা উপজেলার দর্শনা থানপাড়া গ্রামের করিম মিয়ার স্ত্রী সেলিনা বেগম জেসমিনকে (৩২) এক লিটার, যশোর সদর থানার চাচড়া রেলগেট এলাকার আনোয়ারা বেগমকে (৫৫) ১২ বোতল ও মেহেরপুর সদর থানার বাসস্ট্যান্ড এলাকার মল্লিক শেখের ছেলে বাবু শেখকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়।
মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। এ কাজে জড়িত নারীরা ৫/৭ বছরের একটি করে শিশু সঙ্গে করে মানসম্পন্ন বাসের যাত্রী হয়ে ফেনসিডিল নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। যাতে তল্লাশির সময় পুলিশ তাদের সন্দেহ না করে। ২৩ জুলাই আটক বিথী ও জেসমিন কৌশল হিসেবে তাদের ৫ বছর বয়সী ২টি মেয়েকে সঙ্গে এনেছিলেন।
আটক বিথী থানা হেফাজত থেকে জানান, প্রতি বোতল ফেনসিডিল বেনাপোল থেকে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য মাদক ব্যবসায়ীরা যাতায়াত ও খাওয়া খরচ বাদ দিয়ে তাদের ১০০ করে টাকা দেন। কিন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তাদের কোনো খোঁজ নেন না মাদক ব্যবসায়ীরা। পরিবারের লোকজন জামিনের ব্যবস্থা না করলে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জেলেই পড়ে থাকতে হয় তাদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ যাত্রীবাহী পরিবহন দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে ঢাকা যাচ্ছে। এসব বাসে কয়েক কোটি টাকার মাদকদ্রব্য পাচার হচ্ছে। পুলিশ ছোট খাটো দু-একটি চালান আটক করতে পারলেও বড় চালানগুলো রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার খান বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ঠিক কি পরিমাণ মাদক পাচার হচ্ছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে অধিকাংশ মাদকদ্রব্য পাচারকারীকে বাস তল্লাশি করে আটক করা হচ্ছে।
মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও পাচারকারীদের আটক করতে পুলিশ সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।