চলচ্চিত্র নির্মাতা সামিয়া জামানের সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত ছবি ‘ছেলেটি’-এর নাম পাল্টানো হয়েছে। ছবিটির নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘আকাশ কতো দূরে’। সম্পূর্ণ কাজ শেষে বর্তমানে ছবিটি আছে মুক্তির অপেক্ষায়। সামিয়া জামান জানালেন, ছবিটির নাম পাল্টানোর কারণ এবং অন্যান্য প্রসঙ্গে।
সম্প্রতি প্রচার শুরু হওয়া নতুন স্যাটেলাইট চ্যানেল একাত্তর টিভির সিইও হিসেবে সামিয়া জামান এ মুহূর্তে কাটাচ্ছেন ব্যস্ত সময়। সংবাদভিত্তিক এই চ্যানেলটিকে কীভাবে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় তাই নিয়ে তার এখনকার ভাবনা। তাই বলে চলচ্চিত্র থেকে যে দূরে সরে এসেছেন, তা কিন্তু নয়। প্রথম ছবি ‘রানী কুঠির বাকি ইতিহাস’-এর পর দ্বিতীয় ছবি ‘আকাশ কতো দূরে’ নিয়ে দর্শকদের সামনে আসার অপেক্ষায় আছেন তিনি। এ ছবিটি মুক্তির পর নতুন আরেকটি ছবি নির্মাণের পরিকল্পনাও প্রায় চুড়ান্ত করে রেখেছেন সামিয়া জামান।
ছবির নাম ‘ছেলেটি’ পাল্টে ‘আকাশ কতো দূরে’ রাখার কারণ জানতে চাইলে সামিয়া জামান বললেন, প্রথম অবস্থায় ছবির নাম ‘ছেলেটি’ রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে মনে হলো এর মাধ্যমে ছবিটিকে সীমিত করে ফেলা হচ্ছে। কারণ এ ছবিতে কেবল একজন নয়, অসংখ্য ছেলে জীবনের গল্প প্রতীকীভাবে তুলে ধরা হয়েছে । এতে দেশ নিয়ে আকাঙ্খার কথা বলা হয়েছে, স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে। আমাদের স্বপ্ন তো আকাশের সমান । আমরা সবাই স্বপ্ন পূরণের জন্য ছুটে চলি। কিন্তু আমাদের সব স্বপ্ন কখোনোই পূরণ হওয়ার মতো নয়। আকাশ যেমন দূরে, তেমনি আমাদের সব স্বপ্নপূরণও দূরে রয়ে যায়। তাই আমাদের মনে হয়েছে ছবিটির নাম ‘আকাশ কতো দূরে‘ হলে বেশি মানানসই হয়। এই লাইনটি নেওয়া হয়েছে ছবিতে ব্যবহার করা একটি গান থেকে।
অপরাধ ভিত্তিক গল্প নিয়ে নির্মিত ‘আকাশ কতো দূরে’ ছবিতে দেখা যাবে, গ্রামের ছোট এক ছেলে পালিয়ে ঢাকা শহরে চলে আসে। অসৎ সঙ্গে পড়ে সে নানারকম অপরাধ করতে থাকে। একপর্যায়ে ভয়ংকর অপরাধী চক্রের সঙ্গে সে জড়িয়ে যায়। চাইলেও সে সেই চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। ঢাকার শহরের নানা জায়গা, এফডিসি, আশুলিয়া, গাজীপুরের হোতাপাড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হয়েছে ছবির শুটিং। ভারসা মিডিয়া এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্মের যৌথ প্রযোজনায় ছবিটিতে অভিনয় করেছেন অংকন, ফারিয়া, প্রকাশ, নায়করাজ রাজ্জাক, মিশা সওদাগর এবং টোকাই নাট্যদলের একঝাঁক শিশুশিল্পী।
ছবির অভিনয়শিল্পীরা কে কেমন করেছেন? উত্তরে সামিয়া জামান বললেন, আমি যার কাছে যতটুকু প্রত্যাশা করেছি অভিনয়শিল্পীরা প্রত্যেকেই তা পূরণ করতে পেরেছে। ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছে শিশুশিল্পী অংকন। তার অভিনয় আমার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল নায়ক রাজ রাজ্জাকের সঙ্গে কাজ করার। এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি আমাকে সময় দিয়েছেন, এজন্য তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। লাক্স-তারকা ফারিয়ার চলচ্চিত্রে অভিষেক হচ্ছে ‘আকাশ কতো দূরে’ ছবিতে। আমার মনে হয়নি এটা তার প্রথম চলচ্চিত্রাভিনয়। তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন প্রকাশ। ছবির একটি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর। ছোট ছোট হাস্যরসের ঘটনা মধ্য দিয়ে তার চরিত্রটি দর্শকদের সামনে আসবে। অসাধারণ অভিনয় করেছেন তিনি। সবশিল্পীই এ ছবিতে আন্তরিকতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন।
‘আকাশ কতো দূরে’ কী একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র? সামিয়া জামান বললেন, আসলে এটাকে আমি ঠিক শিশুতোষ ছবি বলবো না। যদিও ১০/১২ বছরের একটি ছেলেকে ঘিরে এগিয়েছে ছবির গল্প। তবুও আমি মনে করি, এটি সব বয়সী মানুষের জন্য একটি পারিবারিক ছবি। পরিবারের সবাই মিলে উপভোগ করার মতো ছবি।
সামিয়া জামান তার প্রথম ছবি ‘রানীকুঠির বাকি ইতিহাস’-এ গান চিত্রায়নে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তার দ্বিতীয় ছবিতে থাকছে মোট ৫টি গান। ‘আকাশ কতো দূরে’ ছবির গান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের এই উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হলো গান। গান ব্যবহারের মাধ্যমে আসলে বিভিন্ন চরিত্রের অনুভূতি প্রকাশ করা হয়। গানকে সবসময় আমি একটি ছবির অন্যতম প্রাণ বলে মনে করি। তাই গান ব্যবহার ও চিত্রায়নে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দেই। এ ছবির ৫টি গানই হচ্ছে ভিন্ন মেজাজের। ইবরার টিপু আর বেলাল খান করেছেন সঙ্গীত পরিচালনার কাজটি। খুব আন্তরিকতার সঙ্গে তারা কাজটি করেছেন। আশা করছি আগের ছবিটির মতোই আমার দ্বিতীয় ছবির গানগুলো দর্শকদের ভালো লাগবে।
কবে নাগাদ মুক্তি পাবে সামিয়া জামান পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি ‘আকাশ কতো দূরে’? উত্তরে সামিয়া জামান বললেন, এটা আসলে নির্ভর করছে প্রযোজক ও পরিবেশকের উপর। ছবিটির অন্যতম প্রযোজক হচ্ছে ইমপ্রেস আর পরিবেশনায় থাকছে আশীর্বাদ চলচ্চিত্র। তারা ছবিটি মুক্তি দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করবেন, সেটা কবে তা আমি বলতে পারছি না। তবে এ বছরই ছবিটি মুক্তি পাবে, এটুকু বলতে পারি।