ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সাংবাদিকদের ওপর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব)।
বুধবার রাতেই এ মামলা হবে বলে জানিয়েছে ক্র্যাব সূত্র।
সাংবাদিকদের ওপর ওই হামলার পর ক্র্যাব নেতারা জরুরি বৈঠকে বসে মামলার সিদ্ধান্ত নেন।
ওই সিদ্ধান্তের পর ক্র্যাব সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাভলু বলেন, “মামলায় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের আহত দেখানো হবে।”
এদিকে সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক সাংবাদিকদের ওপর ঢামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসক-কর্মচারীদের হামলার ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেছেন।
এর আগে দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক-কর্মচারীদের ওই হামলায় ১৫ সংবাদকর্মী আহত হন। ভাংচুর করা হয় সংবাদকর্মীদের একটি মোটরসাইকেলও। বিকেলের দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
এক রোগীকে সময়ের আগেই রিলিজ দিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনায় দুপুর সাড়ে ১২টার পর সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।
তারা সাংবাদিকদের ওপর ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করেন।
আহতরা সংবাদকর্মীরা হলেন- ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের রিপোর্টার খলিল আরাফাত, ভোরের কাগজের আসলাম রহমান, করতোয়ার রুদ্র রাসেল, সমকালের দীপু হাজরা ও ফটোসাংবাদিক নয়ন, গাজী টিভির রিপোর্টার সায়েদুল ইসলাম, ক্যামেরাম্যান রিয়াজ ও মোজাফ্ফর, বাংলাভিশনের রিপোর্টার সুজন মাহমুদ, ফয়েজ ও সিনিয়র ক্যামেরাম্যান সেলিম, যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মনিরুজ্জামান উজ্জল, দেশ টিভির মাহমুদ হাসান ও ক্যামেরাম্যান ইয়াকুব হাসান সুমন এবং এটিএন নিউজের স্টাফ রিপোর্টার মফিজুল তপু।
এদের মধ্যে চারজনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এছাড়া চিকিৎসক-কর্মচারীরা গাজী টিভি, দেশ টিভি ও সমকালের ক্যামেরা ভাংচুর করেন। গাজী টিভির একটি গাড়ি ও ক্যামেরাও দখলে নেন তারা।
জানা যায়, গত ১৯ জুলাই এক রোগীকে সার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসকের চড় মারার ঘটনা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ঢামেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন।
বুধবার এ নির্দেশনা দিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ প্রতিটি বিভাগের গেটে লাল কালিতে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সাংবাদিকদের যদিওবা প্রবেশ করতে হয়, তবে পরিচালকের অনুমতি নিতে হবে।
এমন সাইন বোর্ড ঝোলানোর খবর পেয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার আলমগীর হোসেন জরুরি বিভাগ সংলগ্ন সাংবাদিকদের বসার কক্ষের পাশে মোটরসাইকেল রেখে সংবাদ সংগ্রহের জন্য হাসপাতালের ভেতরে যান। এসময় হাসপাতালের উপ-পরিচালক মুশফিকুর রহমান ও বহি:বিভাগের আবাসিক সার্জন নাজমুল হাকিম শাহিনের নেতৃত্বে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ইন্টার্ন চিকিৎসক আলমগীরের মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করেন।
এক পর্যায়ে তারা লাঠিসোটা নিয়ে সাংবাদিকদের ধাওয়া করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে ইন্টার্ন চিকিসকদের নিবৃত করার চেষ্টা চালায়।
এ ঘটনায় ঢামেক ক্যাম্প পুলিশ ও শাহবাগ থানার একাধিক দল উপস্থিত থাকলেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন।
বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে এলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ৫/৬ জন ফটো সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নেয় এবং মারধর করেন। এসময় বাংলাভিশনের একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।
সংবাদ পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে ক্র্যাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাংবাদিক নেতারা সেখানে গেল তাদেরও ধাওয়া করা হয়।
এ পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা হাসপাতালের দক্ষিণ গেটে অবস্থান নেন। এ সময় ভেতর থেকে সাংবাদিকদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
সাংবাদিকদের মারধর ও নির্যাতনের ঘটনায় চিকিৎসা নিতে আসা ও ভর্তিকৃত রোগীরা এসময় ছুটাছুটি করতে থাকেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়।
বুধবার মোটরসাইকেল ভাংচুরের পর হাসপাতালের উপ-পরিচালক মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বে কক্ষটির তালা ভেঙ্গে মেডিক্যাল রিপোর্টারদের জন্য বসার চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে কর্মচারীদের দিয়ে সেগুলো অন্য স্থানে নিয়ে যান ইন্টার্ন চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।
উল্লেখ্য, দুই বছর আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ক্যাম্প সংলগ্ন খালি জায়গায় সাংবাদিকদের বসার স্থান বরাদ্দ দেয়।