ভারতের আসাম রাজ্যের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্থানীয় বড়ো আদিবাসী এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। সহিংসতায় এ পর্যন্ত উভয়পক্ষে কমপক্ষে ৩৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
আসামের কোঁকড়াঝড়, ধুবড়ি, চিরাং এবং বনগাইগাঁওয়ে কমপক্ষে ১৩টি সেনা দল টহল দিচ্ছে।
গত ১৯ জুলাই শুরু হওয়া এ জাতিগত সহিংসতায় এ পর্যন্ত দেড় লাখ মানুষ ঘর ছাড়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ সহিংসতার সূত্রপাত সম্পর্কে সরকারিভাবে কিছু বলা না হলেও কোঁকড়াঝড় এলাকায় বড়ো আদিবাসী ও মুসলমান সম্প্রদায়েরর মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধের জেরেই সংঘাত শুরু হয়েছে বলে ধারণ করা হচ্ছে।
এ দিকে গত কয়েক দিনের চেষ্টা সত্ত্বেও সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব না হওয়ায় কোঁকড়াঝড় এলাকায় ‘দেখামাত্র গুলি’ করার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ।
সংঘাত দমনে আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী অসম গণপরিষদ (এজিপি) এর সভাপতি প্রফুল্ল কুমার মহন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তিনি সহিংসতাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এজিপির একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম আগামী ২৬ জুলাই সংঘাত কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাবে বলে জানান মহন্ত।
এদিকে সহিংতার কারণে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ২১টির মতো ট্রেন স্থগিত করায় আসাম এবং পশ্চিমবাংলায় বিভিন্ন স্টেশনে ২০ হাজারের বেশি যাত্রী আটকা পড়েছে বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বড়োল্যান্ড টেরিটলিয়াল কাউন্সিলের প্রধান হাগ্রামা মহিলারি জানিয়েছেন, প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ সরকারি রিলিফ ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে।
উপদ্রুত এলাকায় এখনো কারফিউ চলছে। সামরিক ও আধা সামরিক বাহনীর সদস্য পুরো এলাকায় টহল অব্যাহত রেখেছে।
চীন, মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং ভূটান সীমান্ত দিয়ে ঘেরা ভারতের উত্তর-পূবাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে দুইশ’রও বেশি নৃগোষ্ঠী ও আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছে। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বীধনতা লাভের পর থেকে একাধিকবার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হয়েছে এ রাজ্যে।
তবে সাম্প্রতিক জাতিগত সংঘাতের রূপ আলাদা। এখানে স্থানীয় বড়ো আদিবাসী এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মুসলমানদের মধ্যে জমি মালিকানা নিয়ে বিরোধ অনেক পুরনো।
অবশ্য অনেকে বলছেন, এ এলাকায় সম্প্রতি মুসলিম বিরোধী মনোভাব মাথা চাড়া দিয়েছে। স্থানীয় হিন্দু এবং খ্রিস্টান আদিবাসীরা অভিবাসন বিরোধী এবং বাংলাদেশি মুসলিম সেটলারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
পুলিশের তথ্য মতে, সর্বশেষ সহিংতা শুরু হয় গত শুক্রবার রাতে বড়ো উপজাতী অধ্যুষিত কোঁকড়াঝড় জেলায় চার তরূণ নিহত হওয়ার পর। তবে কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা জানা যায়নি।
এর প্রতিক্রিয়ায় বড়ো আদিবাসীরা প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠে এবং সশস্ত্র লোকেরা স্থানীয় মুসলমানদের ওপর হামলা করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে অন্য এলাকায়।