সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্যের বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকারের দেওয়া রুলিং নিয়ে দায়ের করা রিট নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
তবে পরে এ বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হবে।
দুইদিন শুনানির পর মঙ্গলবার সকালে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালত আদেশে বলেছেন, ‘ডিসপোসড অফ উইথ সাম অবজারবভেশন’ (কিছু পর্যবেক্ষণসহ আবেদন নিষ্পত্তি করা হলো)।
সকালের শুনানিতে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত রায় বলেন, ‘রিট আবেদনকারী কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নয়। তাই রিট আবেদনটি গ্রহণযোগ্য (মেনটেনেবল) না। এছাড়া রিট আবেদনটি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ এর আওতায় পড়ে না।
এ ক্ষেত্রে যদি রুল দেওয়া হয় তাহলে রাষ্ট্রের দুটি স্তম্ভের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে রুল না দিয়ে পর্যবেক্ষণ (অবজারভেশন) দেওয়া যেতে পারে । এছাড়া সংবিধানের ৭৮ (১) বলা আছে সংবিধানের কার্যপ্রণালী নিয়ে কোনো কোর্টে মামলা করা যায় না।’
আবেদনের পক্ষের আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ আদালতে বলেন, ‘ রুল না দিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দেন। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে পর্যবেক্ষণে স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও আপনাদের (বিচারপতি) বিষয়টি খেয়াল করতে হবে।’
গত ১৮ জুলাই এ রিট আবেদনের ওপর বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের বেঞ্চ শুনানি গ্রহনে বিব্রতবোধ করেন। এর পাঁচদিন পর সোমবার সকালে আবার এ আবেদনটি নতুন বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। এরপর সোমবার বিকালে ও মঙ্গলবার সকালে উক্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার রিট আবেদনকারীপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আখতার ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত রায়।
১৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী একেএম শফিউদ্দিন রিট আবেদনটি দাখিল করেন।
রিট আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদ লংঘন করেছেন উল্লেখ করে ১৮ জুন স্পিকারের জারি করা রুলিং কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদন করা হয়েছে। একইসঙ্গে রুল আদালতের বিবেচনাধীন থাকাকালে ক্ষমতার পৃথকীকরণ বিষয়ক সংবিধানের একটি ধারা লংঘন করে স্পিকার যাতে কোন রুলিং বা আদেশ না দিতে পারেন সে বিষয়ে একটি অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেওয়ার আরজি করা হয়েছে।
রিটে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে বিবাদি করা হয়েছে।
সোমবারের শুনানিতে ব্যারিস্টার আখতার ইমাম বলেন, ‘একজন বিচারপতি সম্পর্কে এ ধরনের অভিমত দিতে পারেন না স্পিকার। তিনি তার আওতার বাইরে গিয়ে এ রুলিং দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘একজন বিচারপতি সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন। তাই বিচারপতি সংবিধান লংঘন করেছেন বলা সমীচীন হয়নি। স্পিকার প্রধান বিচারপতিকে ব্যবস্থা নেওয়ার যে অনুরোধ করেছেন তার কোনো সুযোগ নেই। একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে শুধুই রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা নিতে পারেন।’
আখতার ইমাম বলেন, ‘স্পিকার যে রুলিং দিয়েছেন তা পত্রপত্রিকায় দেখার পর। সংবাদপত্রের প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ সম্পর্কে সংসদে বক্তব্য দেওয়ার পর দেখা গেল ওই প্রতিবেদন ভুল ছিল। এটা প্রমানের পর স্পিকার দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে তা না করে উল্টো রুলিং দেওয়া হয়েছে, যা ঠিক হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্পিকার সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনে সংসদদের প্রস্তাব দেওয়া ঠিক হবে না বলে রুলিং-এ যে মন্তব্য করেছেন তাতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাহার হয়ে গেছে। তারপরও বলবো, বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানিয়ে রুলিং দেওয়া ঠিক হয়নি।’
প্রসঙ্গত, ২৯ মে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সড়ক ভবন সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্যরা। এনিয়ে ৫ জুন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী কিছু মন্তব্য করেন। একইদিন সংসদে কয়েকজন সদস্য এর তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে ওই বিচারপতিকে অপসারণের দাবি জানান। এর ১৩ দিনের মাথায় ১৮ জুন সোমবার স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট সংসদে একটি রুলিং দেন।
রুলিংয়ে স্পিকার বলেন, ‘আদালতের এ ধরনের আচরণে কী করণীয় থাকতে পারে মাননীয় প্রধান বিচারপতি সে বিষয়টি ভেবে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তাতে আমাদের সমর্থন থাকবে। এরফলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা হয়তো সম্ভব হবে।’
ওই রুলিংকে চ্যালেঞ্জ করেই আইনজীবী একেএম শফিউদ্দিন ১৮ জুলাই বুধবার রিট আবেদনটি দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংসদের কার্যধারার বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। ৭৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংসদে বা সংসদের কোনো কমিটিতে কিছু বলা বা ভোট দানের জন্য কোনো সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কার্যধারা গ্রহণ করা যাবে না।