চিরশয্যায় হুমায়ূন আহমেদ

চিরশয্যায় হুমায়ূন আহমেদ

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে তার প্রিয় নুহাশপল্লীতেই দাফন করা হয়েছে।  মঙ্গলবার বাদ যোহর ৩য় জানাজার পর তাকে নুহাশপল্লীর লিচুতলায় সমাহিত করা হয়। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেয়।

এসময় অন্যদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের ভাই লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব, তার বোন, ছেলে নুহাশ আহমেদ, স্থানীয় সাংসদ আকম মোজাম্মেল হক, টঙ্গী পৌর মেয়র আজমত উল্লাহ, অন্যপ্রকাশের মাজহারুল ইসলাম, অভিনেতা ডা. এজাজুল ইলামসহ স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরকে বেশ বেগ পেতে হয়।

কবরস্থ করার আগে শেষবারের মতো হুমায়ূন আহমেদের লাশ দেখার সুযোগ দেওয়া হয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ছেলে নুহাশ, মেয়ে নোভা ও শীলাসহ নুহাশপল্লীর কর্মচারীদের। এসময় অঝোরে কাঁদতে থাকেন শাওন। বিলাপ করতে থাকেন। প্রিয় মানুষটির চিরশয্যার সময় সবাই ছিল অশ্রুসিক্ত। বাবার মরদেহ কবরে নামাতে সহায়তা করেন নুহাশ নিজেই।

আর বড়ভাইকে কবরে নামানোর সময় কান্না ধরে রাখতে পারছিলেন না ছোটভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার গুণগ্রাহী ও ভক্তের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিলো হুমায়ূন আহমেদের প্রতি ভালবাসার কথা। দাফন শেষ হওয়ার পরও অনেকে কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এর আগে মরদেহ দাফনের উদ্দেশে বারডেম থেকে তারই হাতে গড়া গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা ১২টায় তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স নুহাশপল্লীতে পৌঁছায়।

বেলা সোয়া ১২টার দিকে নুহাশপল্লীতে পৌঁছেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ছেলে নিনিত ও নিষাদ। আসেন হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজও।

এর আগে হাসপাতালের আনুষ্ঠ‍ানিকতা শেষে মঙ্গলবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে তাকে বহনকারী জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স বারডেম থেকে বের হয়ে যায়। এসময় পুলিশের ৩টি গাড়ি সঙ্গে ছিল।

ঢাকা-গাজীপুর সড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে ২টি গাড়িতে করে যোগ দেন হুমায়ূন আহমেদের ভাই ড. জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব, ছেলে নুহাশ আহমেদ, মেয়ে শীলা ও নোভাসহ স্বজনেরা।

বারডেমের হিমঘর থেকে মরদেহ গ্রহণ করেন শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী। জনপ্রিয় এ লেখকের মরদেহ শেষবারের মতো দেখতে সকাল থেকে বারডেমের সামনে ভিড় করেছিলেন অনেক মানুষ।

ড. জাফর ইকবালের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

এদিকে দাফন পর্ব সম্পন্ন হওয়ার পরে হুমায়ূন আহমেদের ছোটভাই লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে কথা বলেন। তিনি মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময় তার ভাই আহসান হাবীব, হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নুহাশ আহমেদ, মেয়ে শীলা ও নোভা আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় জাফর ইকবাল বলেন, “হুমায়‍ূনের দাফন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সমাপ্তি হলো আজ।“ অন্যরা  কিছু বলতে চাননি।

সোমবার গভীর রাতে পারিবারিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নুহাশপল্লীতে দাফন হলো হুমায়ূন আহমেদের। এদিন দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটে এ সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

জাফর ইকবাল গভীর রাতে সাংবাদিকদের বলেন, “হুমায়ূন আহমেদের সন্তানরা চাচ্ছিলো তাদের বাবার দাফন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে হোক। কারণ সেখানে সবাই সহজে যেতে পারবে। কিন্তু হুমায়ূনের দ্বিতীয় স্ত্রী শাওনকে রাজি করানো যায়নি। আবার সন্তানরা চাচ্ছে না, তাদের বাবার লাশ বারডেমের হিমঘরে পড়ে থাকুক। এ কারণেই তারা নুহাশপল্লীতে দাফনের বিষয়টি মেনে নিয়েছে।“

হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিনের গর্ভজাত ৩ সন্তান নোভা, শিলা ও নুহাশের সঙ্গে সোয়া এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক করে এ কথা জানান জাফর ইকবাল। বৈঠক হয় স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের বাসভবনে।

এর আগে নানক বৈঠক করেন হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে। হুমায়ূনের ধানমণ্ডির বাসভবন `দখিন হাওয়া`য় ওই বৈঠক চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

বাংলাদেশে স্মরণকালের সবচেয়ে জননন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দাফন নিয়ে পরিবারের সদস্যরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারায় সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী নানককে তার প্রতিনিধি করে এর সমঝোতার জন্য পাঠান।

প্রসঙ্গত, ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হুমায়ূন অস্ত্রোপচার পরবর্তী জীবাণু সংক্রমণে (ইনফেকশন) আহমেদ মারা যান। সেখানে জানাজা শেষে সোমবার সকাল ০৮টা ৫৫ মিনিটে তার মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে মরদেহ সরাসরি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন ও জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ বারডেম হাসপাতালে হিমঘরে রাখা হয়।

 

বাংলাদেশ