সিনেমা শূন্য ঈদ

সিনেমা শূন্য ঈদ

ঈদকে ঘিরে স্বপ্ন বুনেছিলেন নির্মাতা, প্রযোজক ও হল মালিকরা। সবই গুড়েবালি। খুড়িয়ে চলা চলচ্চিত্রে এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। দুর্ধর্ষ করোনাভাইরাসের কারণে এবারও ঈদে মুক্তি পাচ্ছে না নতুন-পুরাতন কোনো সিনেমা। করোনার তাণ্ডবে ঢাকাই সিনেমার ভবিষ্যত নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

সঙ্গত কারণেই আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সেই চিরচেনা রুপ নেই। চার ঈদ, পূজা, বৈশাখ, ভালোবাসা দিবস, সব মিলিয়ে নয়টি উৎসবে মুক্তি পায়নি বড় বাজেটের কোনো সিনেমা। বন্ধ ছিল দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ। মুক্তির অপেক্ষায় আছে ২৫টির বেশি সিনেমা। করোনার মধ্যে প্রেক্ষাগৃহ খুললেও সিনেমা মুক্তিতে আগ্রহ দেখাননি প্রযোজক, পরিচালক ও হল মালিকরা।

এবারও ঈদকে সামনে রেখে সিনেমা মুক্তির পরিকল্পনা করেছিলেন প্রযোজক-পরিচালকরা। তবে করোনার কাছে হার মেনে পিছু হাঁটতে হয়েছে তাদের। সিনেমা মুক্তি ও শুটিং বন্ধ থাকায় বিপাকে চলচ্চিত্র দুনিয়ার মানুষেরা। গত বছর ঈদে মুক্তির কথা থাকলেও করোনার কারণে আলোর মুখ দেখেনি শাকিব-বুবলী অভিনীত ‘বিদ্রোহী’। তবে এবার সিনেমাটি ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।

মুক্তির অপেক্ষা থাকা উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো- ‘অন্তরাত্মা’, ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘মিশন এক্সট্রিম-২’, ‘শান’, ‘ক্যাসিনো’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, ‘পাপপুণ্য’, ‘হাওয়া’, ‘বিক্ষোভ’, ‘জ্বীন’, ‘দিন: দ্য ডে’, ‘বর্ডার’, ‘পরাণ’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’, ‘আগামীকাল’, ‘কানামাছি’, ‘ওস্তাদ’, ‘ডেঞ্জার জোন’ ও ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ইত্যাদি।

চলতি বছর দেখেই সামনে কি করবেন সিদ্ধান্ত নিবেন মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, ‘গত বছর থেকে আমার হল বন্ধ রয়েছে। শুধু আমার হলই নয় বর্তমানে সবার হলই বন্ধ আছে। হল বন্ধ থাকায় সবার অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। মাঝে হল খুললেও এমন অবস্থায় কেউ সিনেমা মুক্তিতে আগ্রহ দেখায়নি। এবং লোকসানের কথা চিন্তা করে সামনেও বড় বাজেটের কোনো সিনেমা কেউ মুক্তি দিতে চাইবেন না।’

ঈদ বিনোদনের এক বড় মাধ্যম সিনেমা। ঈদ আনন্দের রং ছড়াতে বড় তারকা নিয়ে পর্দায় হাজির হয় বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থাগুলো। কিন্তু দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ। ‘ক্যাসিনো’ সিনেমার প্রযোজক রাজীব সরোয়ার বলেন, ‘আমার সিনেমাটি এক বছর ধরে নির্মাণ করে বসে আছি। কয়েকবারই মুক্তির পরিকল্পনা করেছি কিন্তু অদৃশ্যে এই ভাইরাসের কারণে লোকসানের ভয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। তাছাড়া করোনার কারণে সিনেমা হলই বন্ধ আছে। ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তির পরিকল্পনা করব সেটিও করতে পারছি না। কারণ, দেশে এখনও ভালো মানের অ্যাপস তৈরি হয়নি। এখন অপেক্ষা থাকা ছাড়া কিছু করার নেই। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে সিনেমাটি মুক্তি দেব।’

দেশে আঁশিটির বেশি হল চালু থাকলেও অদৃশ্য এই ভাইরাসে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে আরো ত্রিশটি সিনেমা হল। এ রকম আরো কয়েক মাস চলতে থাকলে বন্ধ হয়ে যাবে দেশের আরো কিছু সিনেমা হল।

এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ২০২০-২১ সালের ঈদের মতো খারাপ অবস্থায় কখনও যায়নি। যেন একেবারে বিষণ্ণ এক অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে সিনেপ্রেমী ও নির্মাতাদের। স্মরণকালের দুঃসময়ের সাক্ষী হতে যাচ্ছে সবাই। সংশ্লিষ্ঠদের প্রত্যাশা করোনার আতঙ্ক দ্রুত কাটিয়ে আবারও সবকিছু হয়ে উঠবে স্বাভাবিক। রুপালি পর্দায় ফিরবে সিনেমা।

বিনোদন শীর্ষ খবর