ব্র্যাকের ‌‌‌`বিকাশ` কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া নজরদারিতে

ব্র্যাকের ‌‌‌`বিকাশ` কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া নজরদারিতে

ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ এর অবৈধ ব্যাংকিং কড়া নজরদারিতে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দু এক দিনের মধ্যেই বিকাশ কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে জবাব চাইবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিকাশের অবৈধ ব্যাংকিং এর প্রমাণ মিলেছে। এছাড়াও বিকাশের কর্মকাণ্ড দেশের মানি লন্ডারিং আইন ভঙ্গ করছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন ধরে বিকাশের  অবৈধ ব্যাংকিং করার বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ফলে বিকাশের কর্মকাণ্ড কড়া নজরদারিতে আনা হয়েছে।

বিকাশের গ্রাহকরা যাতে কোনো ভাবেই প্রতারিত না হন তা নিশ্চিত করতেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুসারে, `বিকাশ` কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুধু পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটর হিসেবে অনুমোদন নিলেও আইন অমান্য করে ব্যাংকিং এ জড়িয়ে পড়েছে। গ্রাহকদের হিসাব পরিচালনা করছে। যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির লঙ্ঘন এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, বিকাশকে তার অবৈধ ব্যাংকিং বন্ধ করতে হবে। এবং দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ব্যাংকিং এর দায়ে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সূত্র আরো জানায়, বিকাশের হিসাবে  সাড়ে চার লাখ গ্রাহকদের টাকা জমার যে তথ্য পাওয়া গেছে তা ব্র্যাক ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট হিসাবে সরিয়ে নিতে বলা হবে।

উল্লেখ্য, বিকাশের অবৈধ ব্যাংকিং নিয়ে সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে আরো কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ করে।

সূত্র মতে, ২০১০ সাল প্রতিষ্ঠানটিকে পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটর (পিএসও) হিসেবে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।  কিন্তু সে অনুমোদনের নিয়ম নীতি মেনে চলছে না বিকাশ।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু মোবাইল ফোন ব্যবহার করে লেনদেন করার জন্য অনুমোদন দেয় বিকাশকে। তবে এর বাইরেও ব্যাংকিং বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো আমানত সংগ্রহে জড়িয়ে পড়েছে বিকাশ। এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে চার লাখ লাখেরও বেশি গ্রাহকের হিসাব খুলেছে তারা। কিন্তু গ্রামীণফোন ও রবির নেটওয়ার্ক এবং সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা আউটলেটের মাধ্যমে পিএসও সেবা দেওয়ার কথা তাদের।

সূত্র মতে, বিকাশের এসব হিসাবে সর্বশেষ তথ্যমতে, ৫০০ কোটি টাকা জমা হয়েছে বিকাশের হিসাবে।

২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে পিএসও হিসেবে কাজ করার জন্য সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের আবেদন করে। ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংককে পিএসও হিসেবে কাজের অনাপত্তি দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল একই বিভাগ থেকে ব্র্যাক ব্যাংককে বিকাশের জন্য পিএসও লাইসেন্স দেয়া হয়। অথচ ব্র্যাক ব্যাংক ও বিকাশ দুটো আলাদা প্রতিষ্ঠান। তাদের পরিচালনা পর্ষদও আলাদা।

পিএসওর নীতিমালায় আছে, যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা করে, সেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ লাইসেন্স পেতে পারে। কিন্তু কোন ধরনের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান না হয়েও লাইসেন্স পেয়েছে বিকাশ।

অপরদিকে, দৃশ্যমান এ অনিয়ম দেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দীর্ঘদিন উদাসীন ছিলো। কোন ব্যবস্থাও নেয়নি। জানা গেছে, ব্র্যাকের নীতি নির্ধারক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবসায়িক দাপটের কাছে নত হয়ে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শেষ পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টিংয়ের জের ধরে এ বিষয়ে সক্রিয় হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

বাংলাদেশ