বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল মানুষটা এমনই- কৃতিত্ব নিতে বড্ড ভালোবাসেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করতেও তিনি বেশ পারদর্শী।
আয়ারল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই দেওয়ায় কৃতিত্ব জাহির করতে মোস্তফা কামাল ব্যতিব্যস্ত। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকা বিসিবি সভাপতি বলে বেড়াচ্ছেন ইউরোপ সফর আয়োজনের সমস্ত কৃতিত্ব তার। ওয়ানডের পরিবর্তে টি-টোয়েন্টি খেলতে আইরিশ ক্রিকেট বোর্ডকে রাজি করাতে বিসিবি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরীকে দিয়ে যোগাযোগ করিয়ে ছিলেন তিনি। কেন যেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগকে কোনো কৃতিত্ব দিতে চান না বিসিবি সভাপতি। আসলে আইরিশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্ত কাজটি করেছে বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ। তার জন্য কৃতিত্ব পাওয়ার কথা ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন সিরাজের। আর কামাল বোর্ড সভাপতি হিসেবে এমনতেই কৃতিত্ব পান। তার জন্য বলে বেড়ানোর প্রয়োজন হয় না।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ইউরোপ সফরের খরচপাতি নিয়ে তিনি যা বলেছেন তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাতীয় দলের সঙ্গে সফরে থাকা সাংবাদিকদের বিসিবি সভাপতি বলেছেন, আয়ারল্যান্ডে তিনটি ম্যাচ খেলার জন্য তিন কোটি টাকা খরচ হয়েছে! ক্রিকেট আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশ দলকে কোনো ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়নি। তাদের টাকা নেই, বিসিবির অনেক টাকা। বিসিবি তাই দু’হাতে টাকা উড়িয়েছে। মোস্তফা কামালের দাবি হোটেল ভাড়া থেকে থাকা খাওয়া সব খরচ বিসিবির। নিশ্চয়ই আরিশ ক্রিকেট বোর্ডের মানুষগুলো খুব ভদ্র এবং বিনয়ী। অথবা বিসিবি সভাপতির কথাগুলো সম্পর্কে তারা অবগত না। তারা জানলে হয়তো ভুল তথ্য প্রচারের অভিযোগে মোস্তফা কামালকে কড়া প্রতিবাদ জানাতেন।
আসল ঘটনা হলো ইউরোপ সফরে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার জন্য বিসিবির খরচ নির্ধারণ হয় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মতো। যার সিংহভাগ যাচ্ছে বিমান পরিবহন খরচে। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দুই দিন আগে যাওয়ায় এবং দুইদিন দেরি করে দেশে ফেরায় কিছু টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে বিসিবির। আইরিশ ক্রিকেট বোর্ড ১৪ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ দলকে আতিথেয়তা দিয়েছে। নেদারল্যান্ডসেও ২৫ জুলাই পর্যন্ত আতিথেয়তা পাবে জাতীয় দল। একটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজে যে সব সুবিধা থাকে তার সবই পাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিসিবি সভাপতি সাংবাদিকদের বলেছেন, আয়ারল্যান্ডে যাবতীয় খরচ বিসিবির। তিন কোটি টাকা খরচ হয়েছে কেবল আয়ারল্যান্ডে! আইসিসি সহ-সভাপতি প্রার্থী যখন এমন ভুল তথ্য দিয়ে আরেকটি সহযোগী ক্রিকেট বোর্ডকে বিব্ররত করেন তখন অন্যরা তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে কিছু করার থাকে না।
বিসিবি সভাপতি আইসিসির বড় কর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও তিনি হয়তো জানেন না বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ আয়োজনের জন্য আইসিসির কাছ থেকে অনুদান পেয়েছে ক্রিকেট আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডস। সেই অনুদানের টাকা এবং নিজেদের তহবিল থেকে কিছু খরচ করে বাংলাদেশ দলকে আতিথেয়তা দিয়েছে। বিসিবি সভাপতি যে তিন কোটি টাকা খরচের কথা বলছেন তাহলে বাকি এক কোটি ৭০ লাখ টাকা গেলো কোথায়?
সর্বশেষ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে একটি অতিরিক্ত ম্যাচ খেলার জন্য এখন কিছু টাকা বেশি খরচ হবে বিসিবির। বিসিবি থেকেই রয়েল ডাচ ক্রিকেট বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে খরচ পাতি নিয়ে একটি অতিরিক্ত ম্যাচ খেলার জন্য। তাতে সদয় সম্মতি জানিয়েছে ডাচ বোর্ড।
অতিরিক্ত ম্যাচটি বাদ রেখে এবং সফরের আগে পিছে অতিরিক্ত চার দিন না থাকলে ১২ লাখ টাকা কম খরচ হতো। সেক্ষেত্রে ১৪ জুলাই আয়ারল্যান্ড গেলে এবং নেদারল্যান্ডস থেকে ২৬ জুলাই দেশে ফিরলে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকায় সফর সম্পন্ন হতো বাংলাদেশ দলের।
বিসিবি সভাপতি বোধ হয় ভুলে গেছেন আইসিসি এবং এসিসি ইভেন্ট ছাড়া আন্তর্জাতিক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে বিমান পরিবহন খরচ বহন করে সফরকারী দল। সিরিজের নির্ধারিত সময়ের আগে পরে থাকলে তার দায়ও তাদের। এজন্য স্বাগতিক বোর্ডকে উপহাস করার কোনো সুযোগ নেই। ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডের দারিদ্রতাকে যে ভাবে বিসিবি সভাপতি পরিহাস করলেন তা আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের ক্রিকেট বোর্ড কর্মকর্তাদের জানা উচিৎ। তারা এথেকে বুঝতে পারবেন তাদের ভাবি সহ-সভাপতি কি ধরণের মানুষ।