গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ফখরুলদের চার্জ শুনানি ৩১ জুলাই

গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ফখরুলদের চার্জ শুনানি ৩১ জুলাই

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোট নেতাদের অভিযোগ (চার্জ) শুনানির জন্য আগামী ৩১ জুলাই নতুন দিন ধার্য করা হয়েছে। এনিয়ে তিনবার চার্জ শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হলো।

মঙ্গলবার মামলার অন্যতম আসামি সাদেক হোসেন খোকার পক্ষে চার্জ শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করা হয়। শুনানিতে বলা হয়, সাদেক হোসেন খোকা হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে বিদেশে চিকিৎসাধীন।

এছাড়া মামলার অন্যতম আসামি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার অপর একটি মামলায় মঙ্গলবার কারাগার থেকে ছাড়া পেলেও ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। এই অবস্থায় তার উপস্থিতি ছাড়া বিচারক অভিযোগ গঠনের শুনানি করতে পারেন না।

দুই আসামিকে আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতে হাজির না করা পর্যন্ত চার্জ শুনানি পেছানোর আবেদন করেন তারা।

রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু চার্জ শুনানি পেছানোর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, আসামি সাদেক হোসেন খোকার অনুপস্থিতিতিই অভিযোগ গঠন করা হোক।

অন্যদিকে, সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মিরাস উদ্দিন জানান, এসএম জাহাঙ্গীরকে আদালতে উপস্থিত করা হয়েছে তাই অভিযোগ গঠন করতে বাধা নেই।

এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, এসএম জাহাঙ্গীর এই মামলায় জামিনে আছেন। তাই এ মামলায় তাকে গ্রেফতার করে এই আদালতে উপস্থিত করার সুযোগ নেই। তাই পুলিশ এখন আদালতে উপস্থিত করলেও উপস্থিত বলা যাবে না। অন্য মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হলে সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেবেন। এরপর এই আদালত তাকে হাজির করার জন্য প্রডাকশন ওয়ারেন্ট (পিডব্লিউ) ইস্যু করতে পারেন। এর মাধ্যমেই কেবল আইনগতভাবে তাকে আদালতে উপস্থিত বলা যাবে।

এসএম জাহাঙ্গীরের আদালতে উপস্থিতি নিয়ে অভিযোগ গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ, বিচারক ও আসামিপক্ষে ৩৫ মিনিট ত্রিমুখি তর্ক চলে।

অবশেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের তুমুল বিরোধিতার মুখে অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করে দ্রুত এজলাস ছেড়ে যান বিচারক।

এর আগে গত ২০ জুন ও ৩ জুলাই অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

আসামিপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, মোহসীন মিয়া, ইকবাল হোসেন, ওমর ফারুক ফারুকী। এছাড়া জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানসহ বিএনপিপন্থি শতাধিক আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এ মামলার ৪৬ আসামির মধ্যে মির্জা ফখরুলসহ ৩৯ জন আসামিই জামিনে আছেন। চারজন পলাতক ও তিনজন কারাগারে আটক আছেন। মঙ্গলবার মির্জা ফখরুলসহ জামিনে থাকা আসামিরা আদালতে হাজির ছিলেন।

মির্জা ফখরুল ছাড়া এ মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হচ্ছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার,  স্থায়ী কমিটির সদস্য বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব) অলি আহমেদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশারফ হোসেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্রদলের সাবেক নেতা কামরুজ্জামান রতন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সংসদ সদস্য ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, ঢাকা মহানগর যুবদলের সেক্রেটারী রফিকুল ইসলাম মজনু, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক ইয়াসিন আলী,  যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব,  জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আঃ মতিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহমেদ লিটু, বিএনপি নেতা ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আবুল বাসার, বিএনপি নেতা ও ৪০ নং ওয়ার্ড কমিশনার আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান ওরফে এল রহমান, বিএনপির সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক নবী সোলায়মান, খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি সাবেক কমিশনার ইউনুস মৃধা, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ইসমাইল খান শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দল মোহাম্মাদপুর থানা শাখার সভাপতি মান্নান হোসেন শাহীন, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার যুগ্ম-সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির।

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল হোসেন, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল, ছাত্রশিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ও সেক্রেটারি আব্দুল জব্বার ওরফে জসিম মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

গত ১০ মে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলাটিতে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। এরপর ২৭ মে ছাত্রশিবির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বারকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়।

রাজনীতি