চলতি অর্থ বছরে দেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকগুরোকে ১৪ হাজার ১৩০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করতে হবে। যা তফসিলি ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ ও অগ্রিমের ২ শতাংশ। অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনার সাথে সঙ্গতি রেখে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। যা বিগত অর্থ বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি।
বিদায়ী অর্থ বছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকার্স সভায় ২০১২-১৩ অর্থ বছরের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এসময় তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বিদায়ী অর্থ বছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে ব্যাংকগুলো। ২০১১-১২ অর্থ বছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৪টি, বিশেষায়িত ৩টি এবং ২৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৯টি বিদেশি ব্যাংক মিলে ১৩ হাজার ১৩২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।
নতুন নীতিমালা অনুসারে, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করবে ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এটি সর্বোচ্চ। এর মধ্যে কৃষি ব্যাংক একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিতরণ করবে ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৪ বাণিজ্যিক ব্যাংক বিতরণ করবে ২ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। ২৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। আর ৯ বিদেশি ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৩৫ কোটি টাকা।
জানা গেছে, বিগত বছরের চেয়ে এবার ঋণ বিতরনের পরিমান টাকার অংকে বেড়েছে ৩৩০ কোটি টাকা। তবে ২০১০-২০১১ অর্থ বছরের চেয়ে ২০১১-১২ অর্থ বছরে ঋণ বিতরনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিলো এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা (১৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ)।
কৃষিঋণ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে ড. আতিউর রহমান বলেন, কৃষি ঋণ আদায়ে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো সাফল্য দেখিয়েছে। তাদের ঋণ আদায়ের হার ৯৩ শতাংশ। পক্ষান্তরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর আদায়ের হার ৫৯ শতাংশ। কৃষিঋণ আদায়ে তাই এসব ব্যাংককে আরো যত্মবান হতে হবে।
তিনি বলেন, বিদায়ি বছরে ৩০ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৪ জন কৃষি ঋণ পেয়েছে। যার মধ্যে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪২৮ জন নারী।
তিনি আরো বলেন, ব্যাংকগুলোকে তাদের মোট ঋণের দুই শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণ করতে হবে। সেটি করতে না পারলে তার অনর্জিত অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে এক বছরের জন্য জমা রাখার বিধান গত বছরের ন্যায় এবারও কার্যকর থাকবে।
আতিউর বলেন, অঞ্চলভিত্তিক ফসল উৎপাদন, ফসলের ধরন এবং যে এলাকায় যে ফসল ভালো উৎপাদন হয় সেগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এদিকে, বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সূর চৌধুরি বলেন, বিগত অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি ১৯টি ব্যাংক। এদের থেকে অনর্জিত অংশের ৩ শতাংশ হারে মোট ২৩ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা নেওয়া হয়েছে। যদি চলতি বছরে এসব ব্যাংক এবছরের লক্ষ্যমাত্রার সাথে অতিরিক্ত ঐ পরিমাণ অর্থ বেশি বিতরণ করতে পারে তবে তা ফেরত পাবে। এই অর্থ প্রতিকার অথবা চাপের জন্য কেটে রাখা হচ্ছে। তবে বিদায়ী বছরের কৃষিঋণ নীতিমালাতে ঘাটতির পুরো টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখার কথা বলা হয়েছিলো।
তিনি বলেন, ব্যাংকহুলো শস্য ও ফসল ঋণে পিছিয়ে আছে। আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। তবে তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাঠামো নেই। নেই অভিজ্ঞতা। তবে অতীতের চেয়ে এটি বেড়েছে।
এসময় ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ নীতিমালাকে সন্তুন্তুষ্টভাবে নিয়েছি। তবে আমাদের দাবি, প্রতি বছর যে কৃষিঋণ যাচ্ছে তার সুফল যেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের কাছে তুলে ধরে। এবং আমাদের আরেকটা দাবি, কৃষিঋণের জন্য যে ১০১টি পণ্য তালিকা আছে তা আরো বাড়ানো দরকার।