জর্জিনহোর শেষ পেনাল্টিটা স্পেন গোলরক্ষক উনাই সিমনকে ফাঁকি দিয়ে জড়াল জালে। সঙ্গে সঙ্গেই ওয়েম্বলিতে হাজির হাজার দশেক ইতালি সমর্থক যেন ফেটে পড়লেন দারুণ উল্লাসে, সঙ্গে ইতালি দলও। হবেই বা না কেন? স্পেনের বিপক্ষে প্রথম সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে এই ৪-২ ব্যবধানের জয় যে তাদের ৯ বছর পর আবারও তুলে দিয়েছে ইউরোর ফাইনালে।
এ জয়টা আরও মধুর মনে হতে পারে যদি শেষ ফাইনালের কথাও স্মরণে আসে ইতালির। প্রায় নয় বছর আগে ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ান্ত লড়াইয়ে বিধ্বংসী স্পেনের কাছে ৪-০ গোলে হেরেছিল ইতালি। সে হারের শোধই কি দুই ইউরো ধরে নিচ্ছে আজ্জুরিরা? গেল আসরেও যে তাদের কাছে হেরেই ইউরো যাত্রা শেষ হয়েছিল কোচ ভিসেন্তে দেল বস্কের দলের। এবার লুইস এনরিকের দলের পরিণতিও হলো একই।
তবে পাঁচ বছর আগের-পরের দুই স্পেনের পরিণতিকে একই বলা চলবে না মোটেও। সেই স্পেন ইতালির কাছে হেরেছিল ২-০ গোলে, তবে এনরিকের স্পেন খেলায় একটু হেরফের হলেই খেলে ফেলতে পারত ফাইনাল।
ম্যাচের আগে থেকে পরিষ্কার ফেভারিট ছিল ইতালি। চলতি ইউরোয় সবচেয়ে বেশি বলের দখল, দারুণ প্রেসিং দিয়ে চমকেই দিয়েছিল কোচ রবার্তো মানচিনির দল। সে দলটাকেই কিনা, শুরুর অর্ধে রীতিমতো কোণঠাসাই করে রেখেছিল স্পেন। শুরুর ১৫ মিনিটে বলের দখল ছিল ৭৫ শতাংশ, বক্সের কাছাকাছি বল পেয়ে মিকেল ওইয়ারজাবাল যদি ঠিকঠাক আয়ত্বে আনতে পারতেন, তাহলে শুরুর ১৫ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত স্পেন।
তবে দখল থাকলেও স্পেনকে আক্রমণের সুযোগ কম দিচ্ছিল বনুচ্চি-কিয়েলিনির ইতালি। প্রথমার্ধে ২৫ মিনিটে দানি ওলমোর শটটাই তাই হয়ে ছিল সে অর্ধে দলটির একমাত্র গোলমুখে শট। বিরতির আগে ইতালিও করেছে একটা সুযোগই, এমারসনের দারুণ শটটা প্রতিহত হয় বারে।
বিরতির পর অনেকটা ধারার বিপরীতে গিয়েই গোল পায় ইতালি, ৬০ মিনিটে ডান পায়ের বাঁকানো শটে গোল পান ফেদেরিকো কিয়েসা। এই গোলের পর যেন স্পেন হয়ে ওঠল আরও বেশি মরিয়া। তাতে আজ্জুরিদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ল দলটা।
তবে গোলের সাক্ষাৎটা স্প্যানিশরা পেয়েছে শেষ বাঁশির ১০ মিনিট আগে। যাকে গ্রুপ পর্বের পারফর্ম্যান্সের জন্য রীতিমতো শূলেই চড়ানো হয়ে গিয়েছিল, সেই আলভারো মোরাতার গোলে। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ইতালি কিছুটা রক্ষণাত্মকই হয়ে গিয়েছিল, আর স্পেন আক্রমণাত্মক। ফলে অতিরিক্ত সময় আক্রমণ ছিল কেবল স্পেনেরই, সে তুলনায় ইতালি তেমন আক্রমণে মনোযোগ দিচ্ছিলই না, টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়াটাকেই হয়তো চূড়ান্ত লক্ষ্যবস্তু ঠিক করেছিল মানচিনি।
সেখানে শুরুর পেনাল্টিতেই বাধে বিপত্তি। লোকাতেল্লির শট রুখে দেন সিমন। স্পেনের দানি ওলমোর ফিরতি শটেও গোল আসেনি, ফলে সমতাও ভাঙেনি আর। শটটা ঠেকানো হলো বটে, তবে তা রীতিমতো নায়ক থেকে খলনায়কে পরিণত করে আলভারো মোরাতাকে। মাঝে কিন্তু দুই দল মিলিয়ে পেনাল্টিতে বল জালে জড়িয়েছেন আরও ছয় বার। তবে মোরাতার মিসের কারণেই মূলত পরের পেনাল্টিটাই ইতালির জন্য নিয়ে এসেছিল ফাইনালের সুবাতাস। সেখানে জর্জিনিও কোনো ভুল করেননি। দারুণ বিচক্ষণ পেনাল্টিতে গোল করে ৪-২ ব্যবধানের এক রোমাঞ্চকর জয়ই পাইয়ে দিয়েছেন চেলসি মিডফিল্ডার। সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিত হয়ে গেছে ৯ বছর পর ইউরোর ফাইনালে মাঠে আজ্জুরিরা। আর নিজেদের ইতিহাসের প্রথম সেমিফাইনাল হারের বিস্বাদ নিয়ে ইউরো ২০২০ শেষ হয় স্পেনের।