‘বন্যপ্রাণী অপরাধে’ শীর্ষে অবস্থান করছে ভিয়েতনাম। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাঘের বাণিজ্যিক খামার এবং নাগরিকদের মধ্যে গন্ডারের শিংয়ের ব্যাপক চাহিদা দেশটিকে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের দিক থেকে শীর্ষে নিয়ে গেছে। ভিয়েতনামকে এখন বন্যপ্রাণীর জন্য জঘন্যতম স্থান বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
পরিবশেবাদি গ্রপ ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের (ডব্লিউডব্লিউএফ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে। তারা এশিয়া এবং আফ্রিকার ২৩টি দেশে জরিপ চালিয়েছে। তারা দেখার চেষ্টা করেছে, এসব দেশ গন্ডার, বাঘ এবং হাতি রক্ষায় কেমন ভূমিকা রাখছে।
ডব্লিউডব্লিউএফ সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, বাঘের খামার এবং ঐতিহ্যগতভাবে জনগণের মধ্যে গন্ডারের শিংয়ের ব্যাপক চাহিদার কারণে ভিয়েতনামে বন্যপ্রাণী সংশ্লিষ্ট নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। আর এ কারণে ২৩টি দেশের মধ্যে এ দেশটি এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
অপরদিকে প্রতিবেশী চীনকে বন্যপ্রাণীর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং আহরিত নানা বস্তুর সবচেয়ে বড় অবৈধ বাজার বলে মনে করা হয়। এদেশটি বন্যপ্রাণী অপরাধের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পার্শ্ববর্তী আরেক দেশ লাওস।
ডব্লিউডব্লিউএফ তাদের প্রতিবেদনে মূলত বন্যপ্রাণীর জীবন হুমকি এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবসা ও বন্যপ্রাণী ভক্ষণের বিষয়টির ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
এদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য হয় প্রতি বছর ৮শ’ থেকে এক হাজার কোটি ডলার।
ডব্লিউডব্লিউএফ জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পাচার হয়ে আসা গন্ডারের শিংগুলোর প্রধান গন্তব্যস্থল হচ্ছে ভিয়েতনাম। গত বছর এখানে ৪শ’ ৪৮টি গন্ডারের শিং প্রবেশ করেছে।
এশিয়াতে এ বস্তুটির দাম এবং কদর যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তায় বিক্রি হওয়া কোকেইনের মতো। অনেক রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যাবে- এ বিশ্বাসে লোকজন এগুলো গুড়ো করে সেবন করে থাকে।
আফ্রিকা ও এশিয়ায় এ বস্তুর ব্যাপক চাহিদা মেটাতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে গন্ডার নিধন হচ্ছে। ২০০৯ সালে সরকার এ বাণিজ্য ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নিলেও তেমন ফল হয়নি।
ডব্লিউডব্লিউএফ বলছে, রেকর্ড বলছে, ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪শ’ ৪৮টি শিং সংগ্রহ করা হয়েছে। চলতি বছর এ সংখ্যা আরো ভয়ানক হতে পারে কারণ জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যেই ২শ ৬২টি শিং সংগৃহিত হয়েছে।
ব্যাপকভাবে অবৈধ পথে গন্ডারের শিং আমদানি ঠেকাতে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য ভিয়েতনাম সরকারকে দায়ী করেছে ডব্লিউডব্লিউএফ। তারা বলছে, এ বস্তু কেনার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আইন যথেষ্ট কঠোর নয়। এমনকি ভিয়েতনামের অনেক কূটনীতিকও এর সঙ্গে জড়িত আছেন। গন্ডারের শিং কেনার চেষ্টা করতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় কয়েকজন ভিয়েতনামি কূটনীতিক আটকও হয়েছেন।
সীমান্তে গন্ডারের শিং বেচাকেনা প্রতিহত করতে চীনা কর্তৃপক্ষকে আরো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ বলে উল্লেখ করেছে ডব্লিউডব্লিউএফ। একই সঙ্গে হাতির দাঁতের অবাধ বাণিজ্য করতে দেওয়ার জন্য চীন ও থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছে তারা।
তারা বলছে, প্রতি বছর ১০ হাজারেরও বেশি আফ্রিকান হাতি হত্যা করা হয় শুধু দাঁত সংগ্রহ করার জন্য। আর এসব দাঁতের প্রধান গন্তব্য চীন ও থাইল্যান্ড।
চীন ও থাইল্যান্ডে এমন অবৈধ ব্যবসা বন্ধ না হওয়ার পেছনে দুই দেশেই দুর্বল আইন এবং একটি সমন্বিত একক আইন না থাকাই সবচেয়ে বড় কারণ বলে উল্লেখ করেছে তারা।
অপরদিকে দু’বছর আগে রাশিয়াতে বাঘ রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর বিলুপ্তপ্রায় এ প্রাণীটির ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ছে বলে মনে হয়। ওই সম্মেলনে ১৩টি দেশের নেতারা অংশ নেন। তারা বাঘ সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
কিন্তু তারপরও প্রতিবছর সারা বিশ্বে দুই শতাধিক বাঘের মাংস কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ডব্লিউডব্লিউএফ। বিশ্বে এখন মাত্র তিন হাজার ২শ’ বাঘ বেঁচে আছে। সুতরাং একটি বাঘের মৃত্যুও বড় উদ্বেগের বিষয়।
এর মধ্যে ২০০৭ সালে ভিয়েতনাম সরকার ব্যক্তি উদ্যোগে বাঘের খামার বৈধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাঘের অবৈধ বাণিজ্য ঠেকাতে দেশটির সরকারের ব্যবস্থার নেওয়ার প্রতিশ্রুতি এতে মূল্য হারিয়েছে। ভিয়েতনামে এখন ১১টি বৈধ বাঘের খামার রয়েছে বলে জানায় ডব্লিউডব্লিউএফ।