হুমায়ূনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তারকাদের ঢল

হুমায়ূনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তারকাদের ঢল

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের  মরদেহ ২৩ জুলাই সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। আগেই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট লেখকের প্রতি সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে জনস্রোত শৃংখলা বজায় রাখার উদ্দেশে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। হুমায়ূনকে শ্রদ্ধা জানাতে গণমানুষের ভীড়ে অপেক্ষায় ছিলেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তারকা।

হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ পৌঁছার আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর ছিল লোকে লোকারণ্য। হাজার মানুষের ভিড়ে ছিলেন শোবিজের বিভিন্ন শাখার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তারকাশিল্পী। সবার চোখে জল, হাতে ফুল। সবার চোখে মুখে আপনজন হারানোর গাঢ় বেদনা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভক্ত-অনুরাগীদের পাশাপাশি তারকাদের ভিড় বাড়তেই থাকে। এরই মধ্যে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যায়, আবার ওঠে রোদ । ফুলে ফুলে ভরে উঠতে থাকে হুমায়ূনের কফিন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু সকাল থেকেই হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা তত্ত্বাবধানে সকাল থেকেই ছিলেন তৎপর। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ এমন একজন মানুষ যিনি সাহিত্যকে নির্দিষ্ট শ্রেণীর পাঠকদের কাছ নিয়ে গেছেন সর্বস্তরের মানুষের কাছে। তার সাহিত্য, নাটক আর চলচ্চিত্র মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে আনন্দ-বেদনার নানা রঙ। তাকে দেখতে সাধারণ মানুষের এই ভিড় প্রত্যাশিত।

হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসেছিলেন বর্ষিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সব গুণী মানুষগুলো একে একে চলে যাচ্ছে। হুমায়ূনকে হারিয়ে অনুভব করছি, আপনজন হারানোর বেদনা। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের জন্য আমরা যারা কাজ করে আসছি, হূমায়ূন আহমেদ তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মানুষকে হলমুখী করেছিলেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা জানাতে এসে বলেন, হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন আমাদের আলোকবর্তিকা। শত বছরে এমন মানুষ জন্ম নেয় খুব কম। সাহিত্য-নাটক-চলচ্চিত্র সর্বত্রই তিনি অতুলনীয়। তাঁকে হারিয়ে আমরা নির্বাক।

দীর্ঘ সময় হুমায়ূন আহমেদের কফিনের পাশে অবস্থান করেন গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের মানুষের ভালোবাসা যে কি প্রচন্ড তা আজকের এই ভিড়েই প্রমাণ। এই গুণী মানুষটি আমাদের শিল্প-সাহিত্যকে কয়েক যুগ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আরো কয়েক বছর যদি তিনি থাকতেন, আমরা তার কাছ থেকে আরো অনেক কিছু পেতাম।

হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসেছিলেন অভিনেত্রী তারানা হালিম এমপি। তিনি বলেন, হুমায়ুন ফরিদীর পথ ধরে হুমায়ূন আহমেদও চলে গেলেন। যাদের কোনো বিকল্প নেই, ক্রমশ আমরা তাদের হারিয়ে ফেলছি। সবাই বলে শূন্যস্থান শূন্য থাকে না, কিন্তু এটা এমন শূন্যস্থান যা পূরণ হওয়ার নয়। হুমায়ূন আমাদের যা দিয়েছেন, এ জাতি তা মনে রাখবে শ্রদ্ধার সঙ্গে।

লম্বা ভিড় পেরিয়ে হুমায়ূন আহমেদকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বর্ষিয়ান অভিনেতা ড. ইনামুল হক। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ আমাকে আপনজন হিসেবে জানতেন। তিনি তরুণ প্রজন্মকে বই পড়তে শিখিয়ে গেছেন। তার শূণ্যতা পূরণ হওয়ার নয়। এমন মানুষ যুগে যুগে খুব কমই আসে।

হুমায়ূন আহমেদের কফিন জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাউলশিল্পী কুদ্দুস বয়াতী। তিনি বলেন, আমি ছিলাম অচেনা-অজানা গ্রাম্য এক শিল্পী। আমাকে তিনি মানুষের কাছে সুপরিচিত করে তুলেছিলেন। তার গান গেয়েই আমি কুদ্দুস বয়াতী হয়েছি। উনি সব মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে আসা সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ও শিল্পীদের মাঝে ছিলেন ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, আসাদুজ্জমান নূর, আলী যাকের, মামুনুর রশীদ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, অরুণ চৌধুরী, চয়নিকা চৌধুরী, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আমজাদ হোসেন, মাহফুজ আহমেদ, বারী সিদ্দিকী, সেলিম চৌধুরী, খুরশীদ আলম এবং আরো অনেকে।

 

বিনোদন