মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনারে নারী থাকা নিয়ে আপত্তির বিষয়ে সংসদে ক্ষোভ

মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনারে নারী থাকা নিয়ে আপত্তির বিষয়ে সংসদে ক্ষোভ

মৃত্যুর পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘গার্ড অব অনার’ দেয়ার সময় যেসব এলাকায় নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রয়েছেন, সেখানে বিকল্প খোঁজার সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। এ সুপারিশের বিষয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এটি যাতে বাস্তবায়ন না হয় সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেও দাবি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৫ জুন) সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এ দাবি করেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ তুলে ধরে শিরীন বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে এমন কারণ দেখিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর যে সম্মান প্রদর্শন করা হয়, তাতে নারী ইউএনও যারা উপস্থিত না থাকেন বা তারা যাতে সেই কাজটি না করেন সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে সেই সুপারিশ করা হয়েছে। আমি বিস্মিত, হতবাক ও ব্যথিত যে আমার সহকর্মীরা, এই সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্যরা এমনটি উত্থাপন করতে পেরেছেন। সংবিধানে বলা আছে, নারী-পুরুষে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। সেই দেশে যখন এই ঘটনা ঘটে তখন আমরা স্তব্ধ হয়ে যাই। জানাজার সঙ্গে সম্মান প্রদর্শনের কোনো সম্পর্ক নেই।’

স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী, শুধু বাংলাদেশ নয় তিনি সারা পৃথিবীতে সুনাম অর্জন করেছেন; একজন নারী ও সফল নেতা হিসেবে। আজকে আপনি স্পিকারের পদে বসে আছেন। এই সংসদে আমার বোনেরা সব বসে আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি জেলায় একজন জেলা প্রশাসক স্মারকলিপি দিয়ে বলেছেন, কোনো হিন্দু ম্যাজিস্ট্রেট যেন মুসলমান বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এই সম্মান (গার্ড অব অনার) প্রদর্শন না করেন। কী অবস্থা তৈরি হচ্ছে আমাদের দেশে! স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দল যখন সরকারে, সেই সময়ে জঙ্গিবাদের উত্থান দেখি ফতোয়াবাজি দেখি। এই ধরনের ঘটনা যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থেকে আসে. তা কিছুতেই বরদাশত করা যায় না।’

এ ধরনের কলুষিত সিদ্ধান্ত যাতে না আসে তার জন্য শিরীন আখতার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনও বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা প্রশাসন। ডিসি বা ইউএনও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে থাকেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

অনেক স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নারী কর্মকর্তারা রয়েছেন, আর সেখানেই আপত্তি তুলেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

রবিবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা ওঠার পর সরকারের কাছে সুপারিশ রাখা হয়েছে গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওদের বিকল্প খুঁজতে। সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নারী সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে সমালোচনা।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর