বাংলাদেশের কূটনীতি ভারতমুখি নয় বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, ভারত আমাদের একটি বড় প্রতিবেশী দেশ। কিন্তু কূটনীতি ভারতমুখি এমন কথা বলা যায় না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ দপ্তরে কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
দীপু মনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
ভিন্ন একটি প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রচারের কাজে দক্ষ নয়, এ ব্যাপারে দুর্বলতা আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়ন কাজ করলেও তা প্রচারের জন্য আওয়ামী লীগকে আরও সচেষ্ট হতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতা বিষয়ক ‘টিফকা’ চুক্তি বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরের অপেক্ষায় থাকা বাণিজ্য সহযোগিতা ‘টিকফা’ চুক্তি নিয়ে এখনও চূড়ান্তভাবে বলার মতো কিছু হয়নি। দু’একটি বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে।’
জাতীয় স্বার্থ বজায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ চুক্তি করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
টিপাইমুখ ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, ‘টিপাইমুখ ইস্যুতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতকে বলেছি, টিপাইমুখে বাঁধ হলে কী লাভ হবে তা জানাতে হবে, যৌথ সমীক্ষা করতে হবে। যৌথ সমীক্ষায় যদি দেখা যায় ক্ষতি নেই, তবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’
মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে যে মহাজোট সরকার অতিমাত্রায় ভারত-নির্ভর কূটনীতি চর্চা করছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, ‘ কূটনীতি ভারতমুখি িহয়ে পড়েছে এ কথা ঠিক না।’
নিজের এ কথার ব্যাখ্যা দিয়ে দীপু বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী। অর্থনৈতিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবেও ভারত বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর অর্থ এই নয় যে আমাদের কূটনীতি ভারতমুখি হয়ে পড়েছে এবং অন্য কোনও দেশকে গুরুত্ব দিচ্ছি না।’
দীপু মনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশও আমাদের কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’
পররাষ্ট্রনীতির এ দিকটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে দীপু মনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানির বাজার। আবার ভারত ও চীন থেকে আমরা সবচেয়ে বেশি আমদানি করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
আন্তর্জাতিক ফোরামেও বাংলাদেশের জোরালো অংশগ্রহণ আছে বলে মন্তব্য করেন দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের ৪২/৪৩টি অঙ্গ সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে।’
বাণিজ্যবৃদ্ধি, মানবসম্পদ রপ্তানি, বিশ্বশান্তি রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি বলিষ্ঠভাবে ভূমিকা রাখছে বলেও মন্তব্য করেন দীপু মনি।
উত্তর কোরিয়া বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ওই দেশটির সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। তারা এখানে বিনিয়োগ করতেই পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগ বোর্ড শুধু উত্তর কোরিয়া নয়, যে কোনও দেশের বিনিয়োগের বিষয়টিই দেখাশুনা করে।’
সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন এখানে পাস হয়েছে।’
খাদ্য নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের কাজের কথা উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রসঙ্গে:
যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধে আন্তর্জাতিক কোনও চাপ আছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, ‘গত ৩ বছরে আমি তো এমন কোনও চাপের কথা শুনিনি।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা যে কাজ শুরু করেছিলেন, জিয়াউর রহমান তা বন্ধ করে দেন।’
দীপু মনি বলেন, ‘৪০ বছরের যে ক্ষত প্রশমন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে।’
‘ইনশাআল্লাহ, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এ সরকারের আমলেই হবে’, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে বিশ্বজনমত গঠনে আমি কাজ করেছি। বহু রাষ্ট্রের সমর্থনও আমি আদায় করেছি।’
দীপু মনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বের কোনও দেশই ৭১’র ঘৃণ্য অপরাধীদের পাশে দাঁড়াবে না।’