গণতন্ত্র ও অধিকারের দাবিতে এবং নিজেদের সরকার গঠনের জন্য যখন সিরিয়াতে বিদ্রোহীরা জীবন বাজি রেখে লড়ছে তখন তাদেরই অনেকে মনে করছে, নির্বাসিত ভিন্ন মতাবলম্বীরা অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে যদিও প্রকৃত বিপ্লবে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই।
চলতি মাসের শুরুতে মিসরের রাজধানী কায়রোতে একটি পাঁচতারা হোটেলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিদ্রোহী নেতাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
ইদলিব প্রদেশে বিদ্রোহীরা সরকারি বাহিনীর ট্যাংক, সামরিক যান এবং হেলিকপ্টার হামলার বিরুদ্ধে সাধারণ হালকা অস্ত্র বা কালাশনিকভ রাইফেল নিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। আর অন্যদিকে নেতারা বিপ্লব পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে হাতাহাতি করছেন।
কায়রো সম্মেলনে সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা তাদের মধ্যকার প্রকাশ্য ক্ষমতার দ্বন্দ্বের দিকেই ইঙ্গিত করে।
অবশ্য এর মধ্যে বিদ্রোহীরা প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের অনেক কাছাকাছি পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। গত বুধবার হামলায় সরকারের তিন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
অনেক বিদ্রোহী যোদ্ধা বলছে, তারা একটি চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিকে যাচ্ছে এবং খবরে জানা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ও তার সহচররা উপকূলীয় শহর লাতাকিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্রোহীদের আরেক অংশ বলছে- বিজয় এখনো সুদূর পরাহত। এর প্রধান কারণ মূলত, প্রেসিডেন্ট আসাদের পতন কীভাবে ঘটানো যাবে এবং কারা এর নেতৃত্ব দেবে এ বিষয়টি নিয়েই বিরোধীরা ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছে না।
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, বিপ্লবের ভবিষ্যতের জন্য সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, নির্বাসিত নেতাদের মধ্যে বিরোধ। এরাই আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিরিয়া বিপ্লব এবং যারা জীবন বাজি রেখে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তাদের প্রতিনিধত্ব করছে।
মাসের পর মাস ধরে যে নেতারা বিদ্রোহ সংগঠিত করেছেন, আন্দোলনকে রাজনৈতিক ফ্রন্টে সংযুক্তকরণ এবং সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল ও অন্য বিরোধী ব্লকগুলোতে যোদ্ধাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাই বিদেশে অবস্থানরত নেতাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির দাপটে উপেক্ষতি থেকে যাচ্ছেন।
এরা বিপ্লবের প্রথম দিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সশস্ত্র বাহিনী গঠনে কাজ করেছেন এবং স্থানীয় নেতৃত্ব পেয়েছেন। অথচ তারা মিসর এবং তুরস্কে অবস্থানরত নির্বাসিত বিরোধী নেতাদের সামনে মলিন হয়ে গেছেন। অনেক বিরোধী কর্মীর অভিযোগ, “দেশের বাইরে বিপ্লব এবং যে দেশ সম্পর্কে যারা কথা বলছেন, আসলে তাদের এসবের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই নেই।”
দামেস্কে একজন বিরোধী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “যারা বলছেন যে, তারা আমাদের প্রতিনিধি, তারা আসলে মিথ্যাবাদী। তারা সবাই রাজনীতি করছেন। এরা আমাদের ঘাড়ে চড়ে বসতে চাচ্ছেন।”
নির্বাসিত এবং দেশের অবস্থারত নেতাদের মধ্যকার এ ধরনের বিরোধ এর আগে ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, মিসর বা তিউনিসিয়ায়ও কিছুটা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সিরিয়ায় এ বিরোধ অনেক বিস্তৃত বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা মনে করছেন, এর কারণ হতে পারে নির্বাসিতরা দেশে ফিরতেই পারছেন না।
এ ধরনের বিকেন্দ্রীকরণমূলক বিরোধ বিদ্যামান থাকায় সিরিয়ার বিরোধীদের প্রতিনিধিত্ব করার মতো একক কোনো কণ্ঠ পাওয়া বেশ কঠিন হবে বলেই মনে হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিপ্লব হয়ত সফল হবে, প্রেসিডেন্ট আসাদের পতন হয়ত অবশ্যম্ভাবী, কিন্তু আসাদ পরবর্তী সিরিয়ার ভাগ্য নিয়ে অনেক শঙ্কিত রয়েছে।
অবশ্য বিরোধের অন্য তাৎপর্যও রয়েছে। কায়রো সম্মেলনে যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল সেখানে কুর্দি প্রতিনিধিরা সম্মেলন ত্যাগ করে যায়। বিশ্ব নেতারা বিরোধীদের সমর্থন দিতে দেরি করছে এবং বিরোধী ব্লক আসাদের বিকল্প হিসেবে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করতে পারবে কি না এ আশঙ্কায় তারা সম্মেলন থেকে ওয়াক আউট করে।
তারপরও দেশের বাইরে বিরোধী যারা অবস্থান করছেন তারা আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় এবং বিদ্রোহীদের জন্য তহবিল সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বলে মনে করা হচ্ছে।