বদলে গেছে দৃশ্যপট ঢাকা এখন ইফতারের নগরী

বদলে গেছে দৃশ্যপট ঢাকা এখন ইফতারের নগরী

বদলে গেছে দৃশ্যপট। বদলে গেছে বেশিরভাগ মুসলমানের ১১মাসের গতানুগতিক রুটিন। ব্যক্তিগত জীবনাচরণের মতো মহানগরের দৃশ্যপটেও ঘটেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সকাল থেকে হোটেল-রেস্তোরাঁর সামনের দিকে বন্ধ। কোনো কোনোটিতে পর্দা দিয়ে ঘেরা। নেই প্রকাশ্যে ধূমপান, ফুটপাতের দোকানে খোলা খাবারের পসরা।

মুয়াজ্জিনের আজানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় একটা পরিবেশ বিরাজ করছে যেনো পুরো রাজধানীজুড়ে। দুপুর থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। নগরের এসব দৃশ্যপটই জানিয়ে দিচ্ছে শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস। এসেছে রমজান।

সরগরম ইফতার বাজার
দুপুরের পর থেকেই ইফতারকে ঘিরে যেনো ব্যস্ত রাজধানী। মাথায় টুপি লাগিয়ে ইফতার বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে আছেন। বেলা যতই গড়াচ্ছে, বাড়ছে ক্রেতার সমাগম। কি ফুটপাত, কি পাঁচতারা রেস্টুরেন্ট সর্বত্রই ক্রেতাদের আকর্ষণে চলছে বাহারি ইফতারি আইটেম তৈরির প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতারি।

শনিবার দুপুরে চকবাজারে গিয়ে দেখা যায় বেলা আড়াইটা থেকেই জমে উঠেছে চকবাজারের ইফতারি। পুরাণ ঢাকার বাহারি ইফতারের গন্ধ যেনো ক্রেতাদের আরও বেশি করে ইফতারের আইটেম কিনতে বাধ্য করছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে এসেছেন ভোজন রসিকরা।

উত্তরা থেকে এসেছেন ফয়েজ আহমেদ ও ফৌজিয়া আক্তার দম্পতি। এ দম্পত্তি জানালেন টানা কয়েকবছর ধরে প্রথম রোজাসহ কয়েক পরের কয়েকটি রোজাতে চকবাজার থেকে ইফতার কিনে নিয়ে যান।

`চকের বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়` খাবারটির লোভেই নতুন ঢাকার খাদ্যরসিকরাও ছুটে আসেন পুরান ঢাকার ইফতারি বাজারে।

রামপুরা থেকে আসা গার্মেন্ট ব্যবসায়ী মইনুল হোসেন এ খাবারটি কেনার পর বলেন, “শখের দাম আশি তোলা! দাম যাই হোক, বিষয় না।“

চকের ইফতারের মধ্যে সেলিম বাবুর্চির রয়েছে দীর্ঘদিনের সুনাম। দূর-দূরান্ত থেকে সেলিম বাবুর্চির ইফতার নিতে ছুটে আসেন ক্রেতারা। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। সেলিম বাবুর্চি বাংলানিউজকে জানান, এবার নতুন আইটেম হিসেবে তিনি এনেছেন বড় সাইজের আস্ত মুরগির রোস্ট। এর প্রতিটির দাম রাখা হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা।

এ ছাড়া তার আরেকটি নতুন মুঘল আইটেম `আনাম খাসি`। এর দাম রাখা হবে সাড়ে চার হাজার টাকা। অন্যান্য আইটেমের মধ্যে তিনি বিক্রি করছেন কোয়েল পাখির রোস্ট, প্রতি পিস ৮০-১০০ টাকা এবং চিংড়ি প্রতি পিস ২০০-২৫০ টাকা।

এবার চকের ইফতারি বাজারে `ডিসেন্ট` এনেছে বেশ কিছু সুস্বাদু খাবার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শাহি হালিম, যার প্রতিটি বড় হাঁড়ি ৩০০ ও ছোট হাঁড়ি ১২০ টাকা। ডিসেন্ট আরও বিক্রি করছে টারকি বিফ ২০০, কাশ্মীরি শরবত লিটার ২০০, নিমকপাড়া প্রতি পিস ২০, মুঠিকাবাব প্রতিটি ২০ ও অ্যারাবিয়ান কাবাব প্রতিটি ৮০ টাকা।

চকে বিক্রি হচ্ছে আবদুল জব্বারের বিখ্যাত শাহি দইবড়া। ২০টি দইবড়ার বাটি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।

চকবাজারের মজাদার অন্যান্য আইটেমের মধ্যে আরও রয়েছে ডিম চপ পিস ১৫ টাকা, কচুরি এক কুড়ি ৩৫, ফুলুরি পিস ২, সমুচা পিস ৫-১০, পনির সমুচা পিস ৫, পিয়াজু পিস ৪-৫, আলুর চপ পিস ৫, বেগুনি পিস ৪-৫, চানা বুট কেজি ১৩০,  ডাবলি কেজি ৫০, মুরগির রোস্ট পিস ১৫০-১৮০, খাসির পায়ের রোস্ট পিস ৩০০-৩৫০, সাসলিক পিস ৩০।
এ ছাড়া ইফতারের অন্যতম আইটেম খেজুরের প্রতি প্যাকেট এ বছর ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চকবাজারের পাশাপাশি ধানমন্ডির স্টার কাবাব, লাজিজ, এইচএফসি, ফখরুদ্দীন, পিন্টু মিয়ার শাহি ইফতারি; কলাবাগানের মামা হালিম, হটহাট, অলিম্পিয়া প্যালেস, আম্বালা, খাজানাসহ অন্য রেস্তোরাঁগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা লক্ষ্য করা যায়। এ ছাড়া বেইলি রোড, গুলশান, মিরপুরেও ইফতারির বাজার বেশ জমেছে। উচ্চবিত্তদের অনেকেই অবশ্য পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁও, রুপসী বাংলা (শেরাটন), ওয়েস্টিন ও র‌্যাডিসনের দিকেই বেশি ঝুঁকেছে।

অন্যান্য স্থানের মতো রোজায় রাজধানী ঢাকার মসজিদগুলোর দৃশ্যপটও বদলে গেছে। দুপুরের পরই রাজধানীর মসজিদের বারান্দায় বারান্দায় ইফতারের প্রস্তুতি চলছে। মসজিদের মুয়াজ্জিন ও সেবকদের (খাদেম) ইফতার নিয়ে ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। রোজায় মসজিদে ইফতারের দৃশ্যপট সম্পর্কে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান লিখেছেন, ‘ইফতারের সময় চোখ পড়ে থাকতো সিতারা মসজিদের বারান্দায়। শুধু মনে হতো ওই মুড়ি, ফুল্লুরি, দোভাজা, ছোলা আর বেগুনি মেশানো খাবারটা যেন রূপকথার দেশ থেকে এসেছে…।’ কবির বর্ণনার সেই দৃশ্য শুধু পুরনো ঢাকার সিতারা মসজিদেরই নয়, ঢাকার প্রতিটি মসজিদের বর্ণনায় ঘুরেফিরে একই দৃশ্য।

 

অর্থ বাণিজ্য