বাংলাদেশ দরিদ্র হলেও এখানে ভোক্তা পর্যায়ে প্রচুর অর্থ রয়েছে। বাংলাদেশের বাজার ইউরোপের কয়েকটি দেশের বাজারের চেয়ে সমৃদ্ধ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও আমাদের বাজারে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অথচ রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকেগুলো উদ্যোক্তা ঋণে রাজনৈতিক প্রভাব কাটানোর ফলে এ খাতে বিকাশ হয়নি।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশে শিল্পায়নে প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের অর্থনীতিবিদরা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ খাতে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তা যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যায়, তাহলে স্বর্নিভর হওয়া সম্ভব। এজন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং জাতীয় স্বার্থে সকল দলকে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক একে এম গোলাম হোসেন বলেন, একজন উদ্যোক্তা একটি শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যাংক ঋণ নিতে গিয়ে অনেক হয়রানির শিকার হন। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাঁদাবাজির কারণে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাঁদার পরিমাণ এতো বেশি হয় যে, তাকে শিল্প প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে চলে যেতে হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইমরান হোছাইন বলেন, শিল্প বিকাশের জন্য ব্যাংক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক এমতাজ হোসেন বলেন, ভারতের চোরাই মালামালে দেশ সয়লাব হয়ে গেছে। এগুলো বন্ধ করতে পারলে অভ্যন্তরীণ শিল্প বিকাশ হওয়ার পথ সুগম হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হায়দার বলেন, বলা হয়, বাংলাদেশে শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগে নিবন্ধিত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ৬১ শতাংশই আলোর মুখ দেখে না। তারা নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে চলে যান। মাত্র ৩৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে থাকে।
২০১০-২০১১ অর্থবছরে ১১২ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে উল্লেখ্ করে সেমিনারে বলা হয়, সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে সেই বিনিয়োগ অঙ্কুরেই বিনিষ্ট হয়ে গেছে।
প্রবন্ধে আরো বলা হয়, উন্নত বিশ্বের জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ হলেও আমাদের দেশে সে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত ৬-৭ দশক আগে বাংলাদেশের জাতীয় উৎপাদনের ৬০ অথবা ৭০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে কৃষির অবদানই ছিল মুখ্য। আজ এ চিত্র পাল্টে গেছে। এ স্থানটি দখল করেছে শিল্প-কারখানা।
তিনি বলেন, ২০১০-১১ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ছিল ২৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অথচ শিল্পখাতের সমস্যার সঠিক সমাধান থাকলে আরো উন্নতি সম্ভব হতো।
হায়দার বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের প্রধান শর্তই হচ্ছে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসছেন না। তারা ক্রমশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
শিল্পায়নে প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে ১৩টি সমস্যা চিহ্নিত করে তিনি বলেন, এ খাতে পুঁজি সংগ্রহই প্রধান বিষয়। অপরদিকে চাহিদানুযায়ী ব্যাংক ঋণ পেতেও বাধার মাঝে পরতে হয় উদ্যোক্তাদের। একটি শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে হলে কমপক্ষে ৩২টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ধর্ণা দিতে হয়।
সংগঠনের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে যুব অর্থনীতি ফোরামের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।