শেষ ছয় বলে করতে হতো পাঁচ রান। ওয়াইড থেকে অতিরিক্ত এক রান পেয়েও জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে শেষবল পর্যন্ত। তিন বল থাকতে মুশফিকুর রহিমের উইকেট পতনে সব ওলটপালট হওয়ার যোগার। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাক এবং ইলিয়াস সানি মাথা ঠান্ডা রেখে এক এক করে এগোলেন। ১৯.৫ ওভারে টাই হওয়ার পর শেষ বলে জয় নিশ্চিত হয়।
আয়ারল্যান্ড: ১৪০/৮ (২০ ওভার)
বাংলাদেশ: ১৪১/৮ (২০ ওভার)
ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ দল শেষবার সিরিজের সবগুলো ম্যাচ জিতেছে ২০০৯ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়ানডে এবং টেস্ট ক্রিকেটে। দেশের বাইরে ওটাই ছিলো প্রথম কোন বড় সাফল্য। টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ড গড়ার সুযোগ আগে কখনো আসেনি। বিশ্বকাপ ছাড়া দেশে বা বিদেশে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে একটির বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচই খেলেনি বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে যে দলের র্যাঙ্কিং বলে কিছু ছিলো না তাদের অবস্থান এখন শীর্ষ চারে। আইসিসির সর্বশেষ মূল্যায়নে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলঙ্কার পরেই বাংলাদেশ।
যে আয়ারল্যান্ডের কাছে ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারের স্মৃতি এতদিন তাড়িয়ে ফিরেছে ক্রিকেটারদের, সেই দলটিকে তাদের মাঠে ধবলধোলাই দিয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এটা অনেক বড় একটা অর্জন। ২০১০ সালে বেলফাস্টে হতাশার ঘটনা আছে, আইরিশদের কাছে দুই ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে হেরে গিয়েছিলো বাংলাদেশ। ওই সফরে অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার হাত ধরেই টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচটি জিতেছে।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে প্রাদপ্রদীপের আলোয় আসতে না পারা মাশরাফি, শনিবার দারুণ খেলেছেন। চার ওভার বল করে ১৯ রানে চারটি উইকেট নিয়েছেন। ব্যাটিংয়ে যা করলেন তা অবিশ্বাস্য। এক ফুঁতে চাপ উড়িয়ে দিয়ে চারটি ছয়ের মারে ১৩ বলে ৩০ রান তুলে নেন! ওই মুহূর্তে একটি ঝড়ো ইনিংস খুব দারকার ছিলো। মাশরাফি তা করেছেন বলেই ম্যাচ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে।
২৪১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে বেশ খেলছিলেন তামিম ইকবাল এবং মোহাম্মদ আশরাফুল। তাদের জুটিতে ৯.২ ওভারে আসে ৬২ রান। আশরাফুল ২৫ বলে ২৪ আর তামিম ৩৭ বলে ৩৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন। দুই ওপেনারের বিদায়ের পর উইকেট ধরে রাখতে পারছিলো না। ২৫ রান যোগ করতে সাকিব আল হাসান (৩ রান), মাহমুদউল্লাহ (৯ রান), জিয়াউর রহমান (০) এবং নাসির হোসেনের (৫ রান) উইকেট হারিয়ে ফেলে। সপ্তম উইকেটে মুশফিক ও মাশরাফি ২২ বলে ৪৮ রান যোগ না করলে পরাজয় ছিলো সময়ের ব্যাপার।
আয়ারল্যান্ড ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান করে। টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে সফরকারী বোলারদের তোপের মুখে পড়ে আইরিশ শিবির। পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের স্পেলগুলো ছিলো দারুণ। ইলিয়াস সানি এবং সাকিব আল হাসানও ছেড়ে কথা বলেননি।
স্বাগতিকদের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৫ রান। পল স্টারলিং ব্যক্তিগত ১৭ রানে আব্দুর রাজ্জাকের বলে ক্যাচ দেন সানির হাতে। পরে উইলিয়া পোর্টারফিল্ড ও নিয়াল ও’ব্রায়নের দ্বিতীয় জুটিতে যোগ হয় ৪৬ রান। মাশরাফির বলে সানির হাতে ক্যাচ দিয়ে পোর্টারফিল্ড সাজঘরে ফেরেন ২৮ রান নিয়ে। ২২ রানে ও’ব্রায়ন, গ্যারি উইলসন ২২ ও ট্রেন্ড জনস্টন ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
মাশরাফি ৪ ওভারে ১৯ রান খরচায় ৪টি, রাজ্জাক ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২টি এবং সাকিব ও সানি ১টি করে উইকেট নেন।
এই জয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজ ৩-০ তে জিতেছে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমদের ইউরোপ সফল শেষ হয়নি। রোববারই উড়াল দিবে নেদারল্যান্ডসের উদ্দেশ্যে। সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে স্কটল্যান্ড ও স্বাগতিক নেদারল্যান্ডস ২৪ ও ২৫ জুলাই একটি করে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে। ওখানে জিততে পারলে আরও সমৃদ্ধি ঘটবে বাংলাদেশের।