মানবপাচার চক্রের নেতৃত্বে ভারতে গ্রেপ্তার টিকটক হৃদয়

মানবপাচার চক্রের নেতৃত্বে ভারতে গ্রেপ্তার টিকটক হৃদয়

ভারতে কেরালায় এক বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠা রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধীর সঙ্গে মিলে মানবপাচারের আন্তর্জাতিক চক্র গড়ে তুলেছিলেন।

এই চক্রটির নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইসহ কয়েকটি দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয়ে শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিসি মো. শহিদুল্লাহ।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, হাতিরঝিলের বাসিন্দা এলাকায় ‘টিকটক হৃদয় বাবু’ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপরে পড়াশোনা ছেড়ে বন্ধুদের নিয়ে টিকটক ভিডিও তৈরিতে জড়িয়ে পড়েন।

সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক ও যৌন নিপীড়ন করছে তিন-চার যুবক ও একটি মেয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, নির্যাতনের ঘটনাটি ভারতের কেরালার। তবে ভিকটিম ও নিপীড়কদের একজন বাংলাদেশি নাগরিক।

পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যৌন নিপীড়নকারী যুবকদের একজন হলেন ‘টিকটক হৃদয় বাবু’। এরই মধ্যে তাকে বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

বিষয়টি নিয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশি তরুণীকে নৃশংস যৌন নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ খুবই দ্রুততার সঙ্গে তদন্তে নেমে আসামি ও ভিকটিম শনাক্ত করে। ইতোমধ্যে ভারতে ৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা সবাই আন্তর্জাতিক নারী পাচার গ্রুপ বলে নিশ্চিত হয়েছি। যাদেরকে পুলিশের এনসিবির মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

তিনি জানান, এই চক্রের সদস্যরা স্কুল-কলেজের বখে যাওয়া ছেলে-মেয়েদের টার্গেট করত। বিশেষ করে টিকটক গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করে তারা পাচার কাজে সহযোগিতা করছিল।

মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ভারতে গ্রেপ্তার টিকটক হৃদয় টিকটকের একটি গ্রুপের এডমিন। সেই গ্রুপের মাধ্যমে গত বছরের শেষের দিকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার একটি রিসোর্টে ৭০০/৮০০ তরুণ-তরুণী পুল পার্টিতে অংশ নেয়।

‘মূলত টিকটক ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে তরুণ-তরুণীরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপে সংযুক্ত হয়। যে ফেসবুক গ্রুপটির মূল পৃষ্ঠপোষক এই আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রটি।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই গ্রুপে সুনির্দিষ্ট কিছু ছেলে গ্রুপের নারী সদস্যদের ভারতের বিভিন্ন মার্কেট, সুপার শপ, বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির অফার দিয়ে প্রলোভনে ফেলে ভারতে পাচার করছিল।

চক্রটির মূল আস্তানা ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

ডিসি শহিদুল্লাহ বলেন, ‘মূলত পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন বয়সের মেয়েদেরকে ভারতে পাচার করা হয়। এই চক্রটি ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু হোটেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। হোটেলগুলোতে চাহিদা মাফিক বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের নিয়মিতভাবে সরবরাহ করা হয় বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।’

চক্রের সদস্যরা পাচার করা নারীদের ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুরায় নিয়ে যাওয়ার পর কৌশলে নেশাজাতীয় বা মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে বা জোর করে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারন করত। এরপর ওই নারীদের হুমকি দেওয়া হতো যে, তারা অবাধ্য হলে বা পালানোর চেষ্টা করলে এই ভিডিও তাদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

ডিসি শহিদুল্লাহ বলেন, ‘ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা অবৈধভাবে সেখানে গেছে, তাদের কোনো পাসপোর্ট, ভিসা নেই। মানবপাচার ও পর্নগ্রাফি মামলায় এনসিবির মাধ্যমে দ্রুততর সময়ে তাদের আমরা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

তিনি জানান, এ ঘটনায় ভারতেও মামলা হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশের মামলার প্রধান আসামিও টিকটক হৃদয়, তাই তাকেসহ অন্য সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

আইন আদালত শীর্ষ খবর