যত্রতত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বন্ধ হচ্ছে

যত্রতত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বন্ধ হচ্ছে

নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনে কঠোর হতে যাচ্ছে সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার আগে তার প্রাপ্যতা ও যৌক্তিকতার অনুমোদন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড থেকে নিতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাইব্রেরি এবং নির্ধারিত নিজস্ব জমি থাকতে হবে। পরিদর্শনের পর সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে প্রাথমিক অনুমোদন দেবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড। এরপর পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি, বিষয় এবং বিভাগ খোলার অনুমোদন দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো মানহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা রোধে সরকার এমন কঠোরতায় যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পুরনো নীতিমালা সংশোধন করে যুগোপযোগী নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে।

বর্তমান যে নীতিমালাটি আছে সেটি ১৯৯৭ সালের। ফলে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের স্বীকৃতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এটিকে যুগোপযোগী করা হচ্ছে

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান এবং একাডেমিক স্বীকৃতি, বিষয় ও বিভাগ খোলা সংক্রান্ত নীতিমালা কঠোর ও যুগোপযোগী করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করা হয়েছে।

গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মমিনুল রশিদকে আহ্বায়ক করে গঠিত আট সদস্যের ওই কমিটি একাধিক সভা করে ২৫ বছর আগের নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনে একটি খসড়া তৈরি করে এবং মন্ত্রণালয় সেটির অনুমোদন দেয়। সেটি শিগগির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেয় সরকার। দেশের শিক্ষার মানচিত্র অনুযায়ী প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) সংখ্যা অনেক বেশি। প্রয়োজন না থাকলেও প্রভাবশালীদের তদবির এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় গড়ে উঠেছে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদা যাচাই না করে অপ্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমতি দেয়ায় শিক্ষা খাতে বরাদ্দের বিশাল অঙ্ক ব্যয় হচ্ছে এমপিওতে। কারণ নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমোদনের পর একাডেমিক ও পাঠদান স্বীকৃতি পেয়ে বিভিন্নভাবে এমপিওভুক্ত হতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে। এমন চাপ কমাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন, চালুকরণ ও স্বীকৃতি প্রদান, বিষয় ও বিভাগ খোলা সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।

এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক- ২) মোমিনুল রশিদ আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমান যে নীতিমালাটি আছে সেটি ১৯৯৭ সালের। ফলে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের স্বীকৃতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এটিকে যুগোপযোগী করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘নতুন নীতিমালায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে যৌক্তিকতা ও বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়া হবে। প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রাথমিক অনুমোদন নিতে হবে। পরে একাডেমিক ও পাঠদানের স্বীকৃতি মন্ত্রণালয় দেবে। ইতোমধ্যে খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী মাসের (জুন) প্রথমদিকে এটি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন নীতিমালা-১৯৯৭ অনুযায়ী নতুন স্কুল, মাধ্যমিক জুনিয়র স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ অনুমোদন সংশ্নিষ্ট শিক্ষা বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। জনসংখ্যা, প্রাপ্যতাসহ ১৩টি শর্ত পূরণের মাধ্যমে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হয়। যেমন- প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নামে জমি ক্রয় ও নামজারি, ভবন তৈরি, ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা টয়লেটসহ লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরিসহ পর্যাপ্ত অবকাঠামো নির্মাণ, পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক কর্মরত থাকা। প্রতিষ্ঠার পরও অনেক প্রতিষ্ঠানই সব শর্ত পূরণ করে না এবং অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ইতোমধ্যে এ সুযোগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মতাদর্শের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তাছাড়া মানহীন, অনুমোদনহীন ও সমন্বয়হীন স্কুল-কলেজে দেশ ছেয়ে যাচ্ছে। এ প্রবণতা ঠেকাতে ‘আগে অনুমোদন, পরে স্থাপন’ নীতি কার্যকর করতে চাইছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া, প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রেও নানা অনিয়মের প্রমাণ রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে। এসব বিষয় দুদক পর্যন্ত গড়ানোরও ইতিহাস রয়েছে।

২০১৫ সালে একটি আদেশ জারির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনে বোর্ডের ক্ষমতা কেড়ে নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে নতুন স্কুল-কলেজ স্থাপন, পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি দেয়া হবে। নতুন নীতিমালায় জমির পরিমাণও নির্ধারণ করে দেয়া হবে।

এদিকে অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর বের হয়ে আসছে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেয়া কলেজগুলোর বাস্তব চিত্র। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হতে চাইছেন না। কলেজগুলো তাই শিক্ষার্থী সঙ্কটে ধুঁকছে। একাদশ শ্রেণিতে প্রতি বছরই লাখ লাখ আসন খালি থাকছে। নিয়ম না মেনে যেখানে-সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও কোনো অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া রোধে নতুন অনুমোদনের নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নীতিমালাটির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। বর্তমানে সেটির বাস্তবতা যাচাই করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি কার্যকর করা হবে।’

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর