তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৯৭ রানে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়ালো শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের দেয়া ২৮৭ রানের জবাবে ৪২.৩ ওভারে ১৮৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
এই ম্যাচে জয় পেলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ থেকে ওয়ানডে সুপার লিগের ৩০ পয়েন্ট অর্জনের সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। তবে শেষ ম্যাচ হেরে ১০ পয়েন্ট খুইয়েছে তামিম ইকবালের দল। বাংলাদেশের ইনিংস বেশিদূর এগোতে দেননি মুলত লঙ্কান পেসার দুশমান্থ চামিরা। তিনি একাই ১৬ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিয়েছেন। যা তাঁর ক্যারিয়ার সেরা বোলিং পারফরম্যান্সও বটে।
মাঝারি লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মাত্র ১ রান করে চামিরার বলে স্লিপে কুশাল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন নাঈম শেখ। এই ম্যাচে তিনি লিটন দাসের বদলি হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন। যদিও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। সাকিব আল হাসান আগের দুই ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি ৪ রান করে চামিরার বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন মেন্ডিসের হাতে।
এরপর তামিম ইকবাল ব্যক্তিগত ১৭ রানে চামিরার তৃতীয় শিকার হয়েছেন ডিকওয়েলার হাতে ক্যাচ দিয়ে। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে বেশ ভালোই সামাল দিচ্ছিলেন আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিকুর রহিম। তবে তিনি ব্যক্তিগত ২৮ রানে রামেশ মেন্ডিসকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডি সিলভার হাতে।
মুশফিক ফিরে গেলেও মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ৬৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মোসাদ্দেক। তাঁর ইনিংসটি ছিল ৩টি চার ও এক ছক্কায়। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তাঁর তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। যদিও ঘরের মাঠে প্রথমবার হাফ সেঞ্চুরি পেরুনোর স্বাদ পেলেন মোসাদ্দেক। হাফ সেঞ্চুরির পর তিনি রামেশ মেন্ডিসকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়েছেন।
আফিফ হোসেন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তিনি ১৬ রান করে শিকার হন ওয়ানিডু হাসরঙ্গার। এরপর বাংলাদেশের লেজ গুটিয়ে দেয়ার দায়িত্বটাও নেন চামিরা। পরপর ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ (০) ও তাসকিন আহমেদকে (০)। হাসরঙ্গার দ্বিতীয় শিকার হয়েছেন শরিফুল ইসলাম। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৮ রান।
৬৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানো মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়েছেন বিনুরা ফার্নান্দোর বলে স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে।
এর আগে এই ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান দলপতি। ব্যাট করতে নেমে দুই লঙ্কান ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা ও কুশল দারুণ এক জুটি গড়ে লঙ্কানদের দারুণ শুরু এনে দেন। প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে ৪ বোলারকে বোলিং করালেও কোনো উইকেটের পতন ঘটাতে পারেনি বাংলাদেশ।
প্রথম পাওয়ার প্লে শেষে লঙ্কানদের সংগ্রহ কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭৭ রান। পাওয়ার প্লের পর তাসকিন জোড়া আঘাতে ফেরান গুনাথিলাকা (৩৯) ও পাথুম নিশানকাকে (০)। তৃতীয় উইকেটে কুশাল মেন্ডিসকে নিয়ে আরও ৬৯ রান যোগ করেন কুশল পেরেরা।
এরপর এই দুজনের জুটিও ভেঙেছেন তাসকিন। মেন্ডিসকে ব্যক্তিগত ২২ রানে মিড অফে তামিম ইকবালের ক্যাচ বানিয়েছেন এই পেসার। লঙ্কানরা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রেখেছেন কুশল পেরেরা।
তিনি ৯৯ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। এই ইনিংস খেলার পথে একবার করে, মুস্তাফিজুর রহমান, আফিফ হোসেন ও মাহমুদউল্লাহর হাতে জীবন পেয়েছেন তিনি। অবশেষে এই লঙ্কান ওপেনারকে ব্যক্তিগত ১২০ রানে মিড অফে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে আউট করেছেন শরিফুল ইসলাম।
আর নিরোশান ডিকওয়েলা রান আউট হয়েছেন শরিফুলের দারুণ এক থ্রোতে। শেষ দিকে হাসরঙ্গা ১৮ রান করে তাসকিনের বলে সীমানার কাছে ক্যাচ দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে। তবুও ধনঞ্জয়ার হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে লঙ্কানদের রান দাঁড়ায় ২৮৬তে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
শ্রীলঙ্কা- ২৮৬/৬ (৫০ ওভার) (গুনাথিলাকা ৩৯, পেরেরা ১২০, নিশাঙ্কা ০, মেন্ডিস ২২, ধনঞ্জয়া ৫৫*, হাসরঙ্গা ১৮; তাসকিন ৪/৪৬)
বাংলাদেশ- ১৮৯/১০ (৪২.৩ ওভার) (তামিম ১৭, নাঈম ১, সাকিব ৪, মুশফিক ২৮, মোসাদ্দেক ৫০, মাহমুদউল্লাহ ৫৩; চামিরা ৫/১৬)