দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকা তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার হঠাৎ করেই দাপট দেখাতে শুরু করেছে। এতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৭ মে) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ডিএসইর বাজার মূলধনে বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছে।
বাজার মূলধনের রেকর্ড সৃষ্টির দিনে মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। সূচকের বড় উত্থান ও লেনদেন বাড়াতেও প্রধান ভূমিকা রেখেছে ব্যাংক। তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে ২৯টির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। আর লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি স্থানই রয়েছে ব্যাংকের দখলে।
ব্যাংক এমন দাপট দেখানোর কারণে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ১০১ পয়েন্ট। লেনদেন বেড়ে ২৩’শ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় চার মাস পর ডিএসইতে ২৩’শ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হল।
এদিকে, বাজার মূলধনে রেকর্ড হওয়ার দিনে বৃস্পতিবার ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে। বাজার মূলধন বাড়ার অর্থ হল তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা।
এর মাধ্যমে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বাজার মূলধন। এর আগে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ডিএসইর বাজার মূলধন সর্বোচ্চ ছিল। ওইদিন ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ১ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।
বাজার মূলধনের রেকর্ড সৃষ্টির দিনে লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে বড় উত্থানের আভাস পাওয়া যায়। লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৬০ পয়েন্টের ওপরে বেড়ে যায়। সময়ের সঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাও বাড়তে থাকে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১০১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৯৮৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১৯ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৮৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সূচক এমন হু হু করে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশিকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দামও বাড়তে থাকে। এতে দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও অনেক কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারেননি কিছু বিনিয়োগকারী। দেখতে দেখতে প্রায় দেড় ডজন কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যায়। এরপরও এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের বিক্রেতা সঙ্কট দেখা দেয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দুই শতাংশের ওপরে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেয় ১০৭টি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে ৫ শতাংশের ওপরে দাম বেড়েছে ৪৮টির। আর ৯ শতাংশের ওপরে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ২২টি।
শতাধিক প্রতিষ্ঠানের দাম দুই শতাংশ ওপরে বাড়লেও এদিন ডিএসইতে যে কয়কটি দাম বেড়েছে, প্রায় তার সমান সংখ্যকের দাম কমেছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ১৬৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৩টির। আর ৫৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
রেকর্ড বাজার মূলধন ও সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনও হয়েছে বড় অঙ্কে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৩৬৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। যা চলতি বছরের ১৭ জানুয়রির পর সর্বোচ্চ। ১৭ জানুয়ারি বাজারটি লেনদেন হয় ২ হাজার ৩৮৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এরপর ডিএসইতে আর ২৩’শ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়নি।
বড় অঙ্কের লেনদেনের দিনে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। এদিন কোম্পানিটির ৯৬ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সাউথইষ্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স এবং পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক বেড়েছে ২৭৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১০৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১২৫টির দাম কমেছে এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।