রমজানে অতিরিক্ত মুনাফাকারী, ভেজাল খাদ্য তৈরি ও বিপণন এবং ওজনে কারচুপিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
একই সঙ্গে অননুমোদিত পরিমাণ পণ্য গুদামজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধেও এ আইন প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে।
বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত এক আদেশে এ কথা বলা হয়েছে। আদেশে অসাধু ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’ প্রয়োগে দেশের সব জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ প্রদানের পাশাপাশি প্রতি বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার মধ্যে মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য একটি ছকও তৈরি করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে পণ্য বিপণনের সব পর্যায়ে পাঁচটি আইন মেনে চলার তাগিদ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আসন্ন রমজানে সব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় ও স্বাভাবিক রেখে তা ভোক্তা সাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এ সম্পর্কিত আইন ও আদেশ অমান্য করে কোনো কোনো ব্যবসায়ী ভোক্তা সাধারণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করছে’।
আদেশে বলা হয়, ‘এ ধরনের বেআইনি কার্যক্রম বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে গত ৩ জুন এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের আমদানি, সরবরাহ, মজুদ, সার্বিক মূল্য পরিস্থিতি ও দেশের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে অন্যান্য সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বাজারের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার কথা বলা হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯’-এর আওতায় ভেজাল বিরোধী অভিযান জোরদার এবং একই সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন আইন ও আদেশ ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্যও বিশেষভাবে বলা হয়েছে’।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে যে পাঁচটি আইনের উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- ‘দ্য এসেন্সিয়াল আর্টিকেল্স (প্রাইস কন্ট্রোল অ্যান্ড অ্যান্টিহার্ডিং) অ্যাক্ট ১৯৫৩’, ‘কন্ট্রোল অব এসেন্সিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট ১৯৫৬’, ‘অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদি নিয়ন্ত্রণ আদেশ ১৯৮১’, ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ ২০১১’ এবং ‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯’।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে আরো বলা হয়, ‘এর আগে মন্ত্রণালয় থেকে আমদানিকৃত নিত্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য কী পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা যায় তা উল্লেখ করে অযৌক্তিক মূল্যে বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সময় পাকা রসিদ ব্যবহার না করা, পণ্য পরিমাপে মেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহারে অনাগ্রহ ও অপ্রচলিত পদ্ধতি ব্যবহার, বিভিন্ন পণ্যে ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ, কোনো বিশেষ পণ্য অননুমোদিত পরিমাণে গুদামজাতকরণ ও দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ, নীরব চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য আরো অবৈধ কার্যক্রমের দ্বারা ভোক্তা সাধারণকে পণ্য পরিমাপে, গুণে, মানে ও মূল্যে প্রতারিত করা হচ্ছে’।
‘এ পরিস্থিতিতে দেশের সব জেলায় উল্লেখিত পাঁচ আইন, আদেশ ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট আইন, মোবাইল কোর্ট আইন এবং জনকল্যাণের কথা বিবেচনা করে এ ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালে প্রণীত বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ করা হলো’ বলে আদেশে বলা হয়েছে।