দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপটাকে চীনের সিনোফার্মের টিকা উৎপাদন করতে অনুমতি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
রোববার (১৬ মে) বিকেলে সংবাদমাধ্যমকে এ বিষয়টি জানিয়েছে অধিদফতর।
অধিদফতরের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, উৎপাদনে সক্ষমতা আছে এমন তিন চারটি কোম্পানি আমাদের কাছে আবেদন করেছিল। আমরা বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় দেখে ইনসেপ্টাকে টিকা উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছি। এ মাসেই তারা কাজ শুরু করবে।
এ ব্যাপারে সোমবার (১৭ মে) সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের বিষয়টি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে আমাদের জানায়নি। গণমাধ্যম সূত্রেই জানতে পেরেছি যে, আমরা টিকা উৎপাদনের অনুমতি পেয়েছি।
প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা টিকা উৎপাদনে প্রস্তুত। আমরা ২০১১ সাল থেকেই টিকা তৈরি করে আসছি। দেশের লোকাল মার্কেটে যে টিকাগুলো ব্যবহার হয়, হেপাটাইটিস, টিটেনাস থেকে শুরু করে কুকুরে কামড়ালে যে টিকা (রেভিস) দেওয়া হয়, সেগুলোও আমরা উৎপাদন করে থাকি। এরকম প্রায় ১৪/১৫টি টিকা মার্কেটে আমাদের রয়েছে। সেই হিসেবে আমাদের প্রস্তুতি সবসময়ই থাকে। কোভিডের টিকা উৎপাদনেও আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।
উৎপাদন সক্ষমতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, প্রতিমাসে এখন আমাদের চার কোটি ডোজ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।
এর আগে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর জানিয়েছিল, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডকে টিকা উৎপাদনে অনুমতি দেওয়া যায় কি না তা প্রাথমিক সক্ষমতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ বিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কমিটি।
এছাড়া রেনেটা এবং ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস রাশিয়ার টিকা উৎপাদনের অনুমতি চেয়ে ঔষধ প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে।
এদিকে চীন থেকে করোনাভাইরাসের ৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। গত বুধবার (১২ মে) ভোর ৫টা ৩১ মিনিটে বিমান বাহিনীর (এস-৩এজিএফ) ফ্লাইটে টিকাগুলো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশ সরকার প্রকাশিত নীতিমালা অনুসরণ করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায়, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন হিসেবে চীন থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সিনোফার্মার ৫ লাখ ডোজ টিকা ও এডি সিরিঞ্জ নিয়ে বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০জে পরিবহন বিমান দেশে ফেরার মাধ্যমে এই গুডউইল মিশন সম্পন্ন করেছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গণচীন সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাব রোধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অকৃত্রিম সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক চীন সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) জরুরি ভিত্তিতে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি সিনোফার্মের টিকা অনুমোদন দেয় এ মাসের শুরুর দিকে। এটি পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে প্রথম কোনো দেশের উদ্ভাবিত টিকা যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। চীনে এবং অন্যান্য দেশে লাখ লাখ মানুষকে ইতোমধ্যেই এই টিকা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে সিনোফার্মের টিকার ‘নিরাপত্তা, কার্যকারিতা এবং মান’ যাচাইয়ের পর তা তারা অনুমোদন করেছে। এই টিকা উদ্ভাবন করেছে বেইজিং ইনস্টিটিউট অফ বায়োলজিকাল প্রডাক্টস্।