৪০ বছরের ২২ শ’ কোটি টাকার অনিয়ম বিমানের

৪০ বছরের ২২ শ’ কোটি টাকার অনিয়ম বিমানের

স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ২২ শ’ কোটি টাকার অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করতে পারেনি রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভববনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৬৫তম বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছে খোদ বিমান। কমিটির সভাপতি এবিএম গোলাম মোস্তফা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

এতদিনেও অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি না হওয়ায় কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। দ্রুত এসব অডিট আপত্তি নিষ্পত্তিরও সুপারিশ করেছে কমিটি।

এদিকে কমিটির আগামী বৈঠকে বিমানের চেয়ারম্যানসহ পুরো পরিচালনা পর্ষদকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত রোববার অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিমানের পুরো বোর্ডকে আগামী বৈঠকে হাজির থাকতে বলেছে।

সংসদীয় কমিটির কাছে দেওয়া বিমানের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ১৯৭২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের সর্বমোট অডিট আপত্তির সংখ্যা ৬ হাজার ৬০টি। এর সাথে জড়িত অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ২২৭ কোটি ২১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

আর ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বিমানের অডিট আপত্তির সংখ্যা ৯৪২টি। এর সাথে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা জড়িত। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩১৯টি। নিষ্পত্তিকৃত অর্থের পরিমান প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বাহি ৬২৩টি অডিট আপত্তির সঙ্গে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ওপরে অর্থ জড়িত।

কমিটির প্রভাবশালী সদস্য জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বাংলানিউজকে বলেন, “এত বছরেও বিমান অডিট আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি করতে পারেনি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। কমিটি এ জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে দ্রুত অডিট আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি করতে বলেছে।”

বিমানের পরিচালনা বোর্ডকে কমিটির বৈঠকে হাজির থাকার বিষয়ে বাদল বলেন, “বিমানের যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তার বোর্ড। কিন্তু সংসদীয় কমিটির বৈঠকে হাজির থাকে কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের কাছে কোনো বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা বোর্ডের দোহাই দেয়।”

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরো বলেন, “সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিমানের সব ধরণের বিষয় জানার এখতিয়ার রয়েছে সংসদীয় কমিটির। যেহেতু কর্মকর্তরা উত্তর দিতে পারেন না, সেজন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বোর্ডকেই হাজির থাকতে বলা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিমানের পুরো বোর্ডকে হাজির থাকতে হবে।”

বিমান কিভাবে দ্রুত লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হতে পারে সেজন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে আর্থিক শৃংখলা রক্ষা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে সরকারি অর্থ খরচের ক্ষেত্রে আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অডিট আপত্তি নিস্পত্তির প্রক্রিয়াকে আরো গতিশীল করার সুপারিশ করা হয়। কমিটি আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানকে গতিশীল করার স্বার্থে পারফরমেন্স অডিট চালু করারও সুপারিশ করেছে।

কমিটির সদস্য ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, খান টিপু সুলতান, এস কে আবু বাকের, মইন উদ্দীন খান বাদল, বজলুল হক হারুন ও আমিনা আহমেদ বৈঠকে অংশ নেন।

বাংলাদেশ