বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে গ্রাহক হয়রানি বেশি

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে গ্রাহক হয়রানি বেশি

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সেবা নিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। সাধারণ গ্রাহকের মোট অভিযোগের ২৬ শতাংশই চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিরুদ্ধে। আর একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কৃষিব্যাংকে গ্রাহকরা বেশি হয়রানি হচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকে আসা অভিযোগের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক বছরে ৩০টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের হার ৪৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ, বিশেষায়িত ৪টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ তুলনামূলকভাবে কম, মাত্র ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। এছাড়া ব্যাংক বহির্ভুত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিমাণ ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রের (সিআইপিসি) বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার গভর্নর ড. আতিউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদন অনুসারে, একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বিরুদ্ধে সবেচেয় বেশি অভিযোগ গ্রাহকদের। বিগত এক বছরে মোট ১৪৬টি অভিযোগ এসেছে। যদিও প্রকৃত চিত্র আরো বেশি হবে।  দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানেও রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দু’টি ব্যাংক সোনালী ব্যাংক ও জনতা। এই দুটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ যথাক্রমে ১২৪টি ও ৫২টি।

এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ গৃহীত হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৫১টি। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৪৯টি, ব্র্যাক ব্যাংকের ৩৭টি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৩০টি ও প্রাইম ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৩০টি। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ২৭টি অভিযোগ গৃহীত হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অভিযোগ নিষ্পত্তির দিক থেকে সবেচেয়ে পিছিয়ে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। যার মাত্র ৩৫ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত এক বছরে সিআইপিসি তে টেলিফোনে ১১৭০টি এবং লিখিতভাবে ৯৮১টি অভিযোগ এসেছে। মোট অভিযোগের পরিমাণ ২১৫১।

টেলিফোনে আসা অভিযোগের অধিকাংশই সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত। মোট অভিযোগের প্রায় ৫৩ শতাংশ এক শ্রেণীর। এরপর ঋণ ও অগ্রিম সংক্রান্ত অভিযোগ ৩৩ শতাংশ। রেমিট্যান্স সংক্রান্ত ২ দশমিক ৩১ শতাংশ।
অন্যদিকে, লিখিতভাবে প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর প্রায় ৫১ শতাংশ স্বীকৃতি বিলের মূল্য পরিশোধ না করা সংক্রান্ত। যার ২৬ শতাংশ স্থানীয় বিল ও  ২৪ শতাংশ বৈদেশিক বিল নিয়ে। এর পরেই রয়েছে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত অভিযোগ ১৭ শতাংশ।

বিগত বছরে সিআইপিসিতে প্রাপ্ত মোট অভিযোগের ৩৫ শতাংশ পাওয়া গেছে ঢাকা জেলার গ্রাহকদের কাছ থেকে। অভিযোগ করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের সিআইপিসিতে সর্বাধিক ২৭৬টি অভিযোগ এসেছে, বগুড়া অফিসে ১৪৬টি এবং সিলেট অফিসে ১০০টি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, “ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসাটা স্বাভাবিক। তবে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “ব্যাংক-ব্যবসা যেহেতু গ্রাহককেন্দ্রিক। তাই গ্রাহক সন্তুষ্টি বজায় রেখে ব্যাংকগুলোকে ব্যবসায়িক সুযোগ নিতে হবে।”

অর্থ বাণিজ্য