চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য (জুলাই-ডিসেম্বর) সংযত মুদ্রানীতি ঘোষণা করল বাংলাদেশ ব্যাংক। সংযত মুদ্রানীতি কার্যত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি হিসেবে বিবেচিত হয়। এর ফলে এই সময়কালে সার্বিক মুদ্রা সরবরাহ সংযত থাকবে।
মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ গত মুদ্রানীতির চেয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে বা চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গত মুদ্রানীতিতে ছিল ১৬ শতাংশ। এবার তা বেড়ে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ষান্মাসিক এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গভর্নর ড. আতিউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে মুদ্রানীতি উপস্থাপন করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, নাজনীন সুলতানা, গভর্নরের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক আল্লাহ মালিক কাজেমী, হাসান জামানসহ উর্ধ্বতনরা উপস্থিত ছিলেন।
ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি অর্জনে চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি যোগান প্রসারের দিকেও আমাদের মুদ্রানীতির চ্যালেঞ্জ। এজন্য অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি নিরুৎসাহিত করা হবে। তবে উৎপাদনশীল খাতে মুদ্রা ও ঋণনীতি অব্যাহত থাকবে।’
অন্যদিকে, সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির হারও ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা রয়েছে মুদ্রানীতিতে। গত মুদ্রানীতিতে ছিল ২৮ শতাংশ। যদিও ডিসেম্বর শেষে সরকারের খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি ছিল ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
আবার চলতি অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। অথচ ডিসেম্বরেই মূল্যস্ফীতির হার সে তুলনায় বেশি হয়ে গেছে। বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনাই মুদ্রানীতির প্রধান বিবেচ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাবের ফলে মিশ্র পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয়। এর ফলে আমাদের অর্থনীতি যদি কিছুটা ঝুঁকিতে পড়ে, আমি অবাক হবো না।’
তার মতে, এই মুদ্রানীতি অর্থনীতির বহির্খাতের সামর্থ্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্রিয় থাকবে। বিদেশি মুদ্রার একটি স্বস্তিকর ভারসাম্যের প্রতি মুদ্রানীতি দৃষ্টি রাখবে।
ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘অর্থবছর ২০১২-১৩-এর মুদ্রানীতি অনুযায়ী আর্থিক খাত সংহত করতে নতুন ঋণ শ্রেণিবিন্যাস এবং প্রভিশনিং অনুশাসন প্রবর্তিত হয়েছে। এই পদক্ষেপ ব্যাংক মুনাফায় সাময়িক প্রভাব ফেললেও তা সামগ্রিক তারল্য ও ঋণ যোগানে বিরূপ কোনো প্রভাব ফেলবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে আল্লাহ মালিক কাজমি বলেন, ‘বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেসরকারি খাতে যে পরিমাণ ঋণ দরকার হবে তা মুদ্রানীতি থেকে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বেসরকারি খাত সংযত অবস্থানে রয়েছে। তবে অপ্রয়োজনীয় খাতের ঋণ সরিয়ে এনে উৎপাদনশীল খাতে নেওয়া হবে।’